গাইবান্ধার ধাপেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের রোপিত কচু ক্ষেতে এখন চলছে গাঢ় সবুজের বিপ্লব। চারদিকে দিগন্ত জুড়ে শুধু নজর কাড়ছে সবুজ পাতার কচু ক্ষেত। এবারে অধিক ফলন পাওয়ার সম্ভাবনায় কৃষদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কচু দীর্ঘদিন ধরেই চাষ হচ্ছে সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকায়। এই উপজেলার সবজি ভান্ডারখ্যাত এলাকা ধাপেরহাট। আলু, পটল, করলা, শসা ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ধাপেরহাটের গ্রামাঞ্চলে চাষ করা হয়েছে বইকচু। গত বছরের তুলনায় এবার কচুর আবাদ অনেকটাই বেড়েছে। ফলনও হতে পারে বাম্পার। সেই সঙ্গে বাজারে বেড়েছে কচুর কদর। ফলে কচু আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করছেন ধাপেরহাটের কৃষকেরা।
মঙ্গলবার সকালে কথা হয় ধাপেরহাট ইউনিয়নের ছত্রগাছা গ্রামের কৃষক আয়নাল মিয়া জানান, আমাদের এলাকায় কচু জাতের মধ্যে বিলাসিমুখি কচু একটি উচ্চফলনশীল জাত। বিলাসি বা মুখি জাতের কচু গাছ সবুজ, খাড়া, মাঝারি লম্বা, এর মুখি খুব মসৃণ, ডিম্বাকৃতির হয়। এঁটেল দোআঁশ মাটিতে মুখিকচু ভাল হয়। আংশিক ছায়া জায়গাতেও চাষ করা যায়।
এ জাতের কচু রোপনের সময় মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন ও মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ। মুখিকচু উৎপাদনের জন্য জমি খুব ভালোভাবে চাষ দিতে হবে। তা না হলে মুখি বড় হয় না, মুখির মানও খারাপ হয়। জমি চাষের পর মাটি সমান করে সারি করে গুড়িকন্দ রোপন করতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে সারি বরাবর জুলি বা নালা টেনে তার মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে গুড়িকন্দ ফেলে দুপাশের মাটি টেনে জুলি ঢেকে দিতে হবে।
আলীনগরের কৃষক মোখলেছার রহমান জানান, উর্বর মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সেমি রোপন করতে হয়। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হয়।
মুখীকচুর বীজ বপনের গভীরতা হতে হবে ৮ থেকে ১০ সেমি। গোবর, টিএসপি ও এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০-৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
আগাম লাগালে অনেক সময় বৃষ্টি না হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। সেক্ষেত্রে সেচ দিয়ে মাটির রস ধরে রাখতে হবে। তাছাড়া মুখিকচুতে সেচ দেয়ার তেমন দরকার হয় না। মুখিকচুর পরিচর্যা ক্ষেত্রে সার উপরি প্রয়োগের পর গাছের গোড়ার মাটি টেনে দিতে হবে। জমি আগাছা মুক্ত করা, খরার সময় প্রয়োজনে সেচ এবং অতি বৃষ্টিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, মুখিকচুতে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ কম দেখা যায়। পোকার মধ্যে পাতা খেকো লেদা পোকা ও লাল মাকড় ক্ষতি করে। রোগের মধ্যে ফাইটোফথোরা পাতা পোড়া রোগ অন্যতম। এ রোগ হলে পাতার নিচে প্রথমে জলবসা গোল গোল দাগ পড়ে। পরে দাগগুলো শুকিয়ে বাদামি হয় ও ওপরে উঠে আসে। শেষে পুরো পাতাই শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। অথবা আক্রমণের শুরুতে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম যে কোনো ছত্রাকনাশক গুলে আক্রান্ত ক্ষেতে স্প্রে করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, মুখিকচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। গুড়ি কন্দ লাগানোর পর ফসল তুলতে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। গাছ সম্পুর্ণ মারা যাওয়ার পর মুখিকচু তোলা উচিৎ।
বোয়ালীদহ গ্রামের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, কচু চাষে বিঘা প্রতি (৩৩ শতক) ১০ হাজার টাকা খরচ করে ফলন পাওয়া যায় ৭০ থেকে ৭৫ মণ। স্বাভাবিক বাজার মূল্যে যা বিক্রি শেষে ৫০ হাজার টাকা নিট আয় করা সম্ভব। ফলে এ এলাকার কৃষকরা কচু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
এদিকে সাদিপাড়া গ্রামের খোকা মিয়া ও দুলু মিয়া অভিযোগ করেন বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের কোনো পরামর্শ দেন না। এমনকি তাদেরকে খবর দিলেও চোখে দেখা যায় না। কৃষি বিভাগের পরামর্শ কিংবা কোনো সহায়তা পেলে আরো লাভবান হওয়া সম্ভব।
সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বলেন, কচুর দাম বাজারে তুলনামূলক ভালো থাকায় কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। কচুর আবাদ নিয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
বিবার্তা/তোফায়েল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]