শিরোনাম
প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক, নির্বিকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৮, ০৯:৩০
প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক, নির্বিকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের মাদকবিরোধী জিরো টলারেন্স ক্রাশপ্রোগ্রামেও মৌলভীবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। জেলার চিহ্নিত মাদক বিক্রির স্পট গুলো এখনো অক্ষত।


অদৃশ্য কারণে চলমান বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়নি জেলার মাদক গডফাদাররা। বরং চলাফেরা করছেন অনেকটাই ধাপটের সাথে। তবে পুলিশ সুপার বলছেন, মাদক প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি তাদের জানা নেই।


অনুসন্ধানে জানা যায়, এখন মাদক বিক্রির ধরণ পাল্টিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযানের আগে দোকান, বাসা বা বাড়িতে বিক্রি করলেও এখন বিক্রি হয় ভ্রাম্যমান ভাবে। ক্রেতার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে উভয় মিলিত হন নিরাপদ স্থানে। এভাবে প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও বড় বড় বাজারে লাখ লাখ টাকার মাদক প্রতিনিয়ত বিক্রি হচ্ছে। যার ফলে মৌলভীবাজার জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব পড়ছে না।


এ নিয়ে জেলার সচেতন নাগরিকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তারা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালালে মাদক গডফাদাররা মফস্বল এলাকায় এতো সাহস পেত না। প্রশাসনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিশেষ অভিযানের সময়ও রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে গডফাদাররা গ্রেফতার হচ্ছে না।


একটি সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন দফতর মৌলভীবাজারের ‘টপ টেন’ মাদক ব্যবসায়ীদের নাম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় গত মাসের ২৭ মে এবং জেলা পুলিশের কাছেও গডফাদারদের একটি তালিকা রয়েছে। তারপরেও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ এমন অবস্থায় চলছে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাজ।


এই প্রতিবেদক সম্প্রতি শহরের অন্যতম মাদক বিক্রির এলাকা হিসেবে পরিচিত ক্লাব রোডস্থ মেথর পট্টিতে গেলে দেখতে পান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও চলছে ইয়াবা বিক্রি। পরবর্তীতে প্রতিবেদক ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় পুনরায় গেলে দেখতে পান একাধিক যুবক মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, রিক্সা ও টমটমে এসে নিরাপদে মাদক নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘরের সামনে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু অভিযানের আগে বয়স্করা বিক্রি করলেও এখন একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশু ও মহিলাদের। যাতে কেউ বুঝতে না পারেন।


শনিবার দুপুরে শহরের আরেক অন্যতম মাদক বিক্রর এলাকা হিসেবে পরিচিত চাঁদনীঘাট ব্রীজের নিছে গেলে দেখতে পান, একটি কুড়ে ঘরের সামনে চেয়ারে বসে একজন লোক বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকদের সাথে হাতবদল করছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সতর্ক।


প্রতিবেদক শুক্রবার বিকালে পরিচয় গোপন রেখে মুরাদ নামে এক মাদক সম্রাটের সঙ্গে মোবাইলে ইয়াবা কিনতে চাইলে সে বলে, সন্ধ্যার পর পৌরসভার সামনে এসে ফোন দিবেন। নিরাপদে নিয়ে যেতে পারবেন কোনো অসুবিধা হবে না। পরের দিন প্রতিবেদক ওই মাদক সম্রাট মুরাদের কাছে জানতে চান পুলিশ কোনো সমস্যা করবে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে (এমন খারপা কথা বলছে যেটা সংবাদে উল্লেখ করার মতো নয়) এটা তো সারা জীবনই সমস্যা। এটা কোনো সমস্যা বলে আমরা মনে করি না। গাড়ি নিয়ে আসেন, নিরাপদে নিয়ে যেতে পারবেন। পৌর শহরের কাজিরগাঁও এলাকায় শিপা নামের এক মাদক কন্যা বাসাতে বসেই মাদক বিক্রি করছেন।


অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার কুলাউড়া উপজেলার পূর্ব গুড়াভূই গ্রামের মোঃ শাহেদ মিয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের জুয়েল মিয়া, রাজনগর উপজেলার মতিউড়া চা বাগানের নারায়ণ নাইডু, গোপাল রাজভর, মিলন কানু, সদর উপজেলার ব্রাক্ষণগাঁও গ্রামের রানু বেগম, নিজাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামের সুয়েল মিয়া, মাইজদিহি গ্রামের রুমেল মিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের মোঃ আব্দুল্লাহ, সরকার বাজারের শাহিন মিয়া, গিয়াস মিয়া, পৌর শহরের শাহ মোস্তফা রোডের সবুজ, ইরা, মুর্শেদ, রনি ও ফটু দীর্ঘ দিন ধরে রমরমা মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা করেন।


অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোর হাটবাজার, বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করেন।


তবে একটি সূত্র দাবি করছে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু অসাধু নেতাকর্মী ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এমন অবৈধ কাজ করছেন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝে মধ্যে নামকা ওয়াস্তে দু’একটি অভিযান পরিচালনা করা হয় শুধু মিডিয়া কভারেজ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনের জন্য। এ অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ছে না। যার ফলে মাদকে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে এ জেলার অধিকাংশ যুব সমাজ। এমনকি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীও।


তাদের দাবি, জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবেশদার বন্ধ ও প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি না হলে অভ্যন্তরীণ ওই অভিযান থেকে কোনো ফলই আসবে না।


এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বিবার্তাকে জানান, প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তথ্য পেলে নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।


বিবার্তা/আরিফ/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com