শিরোনাম
অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ : ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল
প্রকাশ : ২৬ মে ২০১৮, ০৯:২৩
অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ : ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল
তানভীর আঞ্জুম আরিফ
প্রিন্ট অ-অ+

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিকে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে ইসি এ এলাকায় পরিবেশ দূষণ করে এমন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও হাকালুকি হাওরে চারপাশে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে এক ডজনেরও বেশি ইটভাটা। যেগুলোর কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। আর এসব অবৈধ ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে বনাঞ্চল।


তবে রহস্যময় কারণে স্থানীয় প্রশাসন, বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদফতর এ ব্যাপারে নির্বিকার ভূমিকার পালন করছে।


সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওর ইসি এই ঘোষণার পরই মূলত সবগুলো ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ২০০২ সাল থেকে হাকালুকি হাওর উন্নয়নে পরিবেশ অধিদফতর কাজ শুরু করে। আর ইটভাটার শুরু করার আগে প্রথমে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষি অফিস এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়।


স্থানীয় লোকজনের প্রশ্ন-তাহলে ইটভাটাগুলো গড়ে উঠল কিভাবে? এসব ইটভাটাগুলোর ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি অফিস ও পরিবেশ অধিদফতরের অনৈতিকতার অভিযোগও করেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।



কুলাউড়া, জুড়ী বড়লেখা ও ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় বন ও পরিবেশ আইন লংঘন করে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়িতই উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাকে জিগজাগ পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে সরকার প্রায় ৫ বছর পূর্বে আইন ও নির্দেশনা প্রদান করলেও এর তোয়াক্কা করছেন না অধিকাংশ ব্রিকফিল্ড মালিক।


বিশেষ করে ইসি এই এলাকাভুক্ত ইটভাটাগুলো প্রায় ৭ বছর আগে পরিবেশ অধিদফতর বন্ধ ঘোষাণা করে। কিন্তু তা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।


হাকালুকি ইসি এই এলাকায় কুলাউড়ায় শাপলা ব্রিকস নামের ইটভাটা রয়েছে। জুড়ী উপজেলায় ৩টি ইটভাটা রয়েছে। সেগুলো হলো জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গুলশান আরা মিলির মালিকানাধীন এমকো নামে দুটি এবং মেসার্স বাবু ব্রিকস নামে অপর একটি ভাটা রয়েছে। বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে দক্ষিণভাগের রাঙাউটি এলাকায় ভাই ভাই ব্রিকস মালিক সাহাব উদ্দিন, সুজানগরের ভোলারকান্দি গ্রামে এনবির মালিক নজরুল ইসলাম। গাঙ্গকুল ব্রিকসের মালিক নিজাম উদ্দিন। সুজানগরে তেরাকুড়ি এলাকার নিন্মাঞ্চলে আজিমগঞ্জ বিজনেস সোসাইটি নামে একটি সংস্থা চলতি মৌসুম থেকে এবিএস নামক ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।


হাকালুকির পশ্চিম তীর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে দুটি ইটভাটা। এর একটির মালিক উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আবদুল মছব্বির। অপর ভাটাটির মালিক মছব্বিরের বন্ধু হুমায়ূন কবীর। এছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ইসিএ এরিয়ায় দুটি ইটভাটা রয়েছে।


একাধিক নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, কুলাউড়া জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে রাতের আঁধারে কাঠ এনে স্থুপ করে রাখা হয় এবং প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এসব কাঠ পোড়ানো হয়।


আরো অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ম্যানেজ করেই অবৈধ এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।


সরেজমিন কুলাউড়া-জুড়ী-বড়লেখা সিএন্ডবি সড়কের মেসার্স বাবু ব্রিকস ও এমকো ব্রিকসে ব্যাপক পরিমাণে কাঠ পোড়াতে দেখা গেছে। ইসি আওতাভুক্ত এলাকায় সনাতন পদ্ধতির এসব ব্রিকস ফিল্ড প্রায় ৭ বছর আগে পরিবেশ অধিদফতর বন্ধ ঘোষণা করে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ব্রিকস ফিল্ডে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বনাঞ্চল রক্ষায় সরকার সব ইটভাটাকে জিগজাগ ব্রিক ফিল্ডে রূপান্তরিত কারার নির্দেশ দেয়।


মেসার্স শাপলা ব্রিকসের ম্যানেজার বকুল ধর ইট তৈরিতে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বিবার্তাকে জানান, শ্রমিকের রান্নার জন্য কিছু কাঠ রয়েছে। আগামী বছর ইটভাটাটি জিগজাগ পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করা হবে বলে জানান তিনি।


বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বিবার্তাকে জানান, তিনি নিজে বিভিন্ন ইটভাটা পরিদর্শন করে ইট তৈরিতে কাঠ না পোড়াতে মালিকদের সতর্ক করেছেন। এছাড়া স্টাইকিং ফোর্স নজর রাখছে। কোনো ইটভাটা মালিক কাঠ পোড়ালে বন আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/আরিফ/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com