শিরোনাম
ঈদ উপলক্ষে সরগরম টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১৬:৪৬
ঈদ উপলক্ষে সরগরম টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প
শাড়ী বুননে ব্যস্ত এক তাঁতী (ছবি : মোল্লা তোফাজ্জল)
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে সরগমর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের এতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। জেলার তাঁত পল্লী গুলোতে সর্বত্রই চলছে বাহারি ডিজাইনের কাপড় বুনানোর ধুম।


উচ্চমূল্য দিয়ে সুতা ক্রয়সহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হলেও ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শাড়ী উৎপাদন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।


সংসারে বাড়তি আয় যোগ করতে কাজ করছেন পরিবারের মহিলারাও। তবে বেঁচা-কেনা ভালো হলেও দুশ্চিন্তা আর হতাশা পিছু ছাড়ছেনা তাঁতীদের।


দেশীয় মার্কেট গুলোতে ভারতীয় শাড়ীর অবাধ প্রবেশ, সুতার দাম বৃদ্ধি, পাওয়ারলোম তাঁত মেশিনের দাপট, শাড়ী ব্যবহারের প্রতি নারীদের অনিহা ইত্যাদি নানান কারণেই তাঁত শিল্প তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে বলে তাঁতীদের অভিমত। এছাড়া তাঁত শিল্পের দেখভাল করার জন্য সরকারের কোনো দফতর আছে কিনা তাও জানেনা অধিকাংশ তাঁতী।



তাঁত মালিক মমিনুর রহমান বলেন, নিম্নমানের ও সস্তা দামের ভারতীয় শাড়ী দেশীয় বাজারে প্রবেশ করায় আমাদের অনেক ভালো মানের শাড়ী মার খাচ্ছে। গত দু’যুগ ধরে বেড়েই চলেছে সুতার দাম। পাওয়ারলোম মেশিনে চাহিদার চেয়েও বেশি শাড়ী উৎপাদন হচ্ছে। আর অন্যদিকে নারীরা এখন তাদের দেশীয় বাঙ্গালিয়ানা হারিয়ে থ্রীপিসসহ নানা আধুনিক পোশাক পরছে। যার ফলে নানা কারণেই আমাদের শাড়ী ব্যবসা মূলত ঈদ নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশীয় বাজারে ভারতীয় শাড়ী প্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে এবং তৃণমূল তাঁতীদের সমস্যা নিয়ে সরকার আলোচনায় না বসলে এক সময় তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।


মায়ের স্মৃতি শাড়ী ভূবনের মালিক ফরিদ বিন মুসলিম জানান, সম্প্রতি টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পকে “টাঙ্গাইল জেলার ব্র্যান্ডিং” ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁত শিল্প ক্রমে চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের হাতে। স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋন পাচ্ছেনা ব্যবসায়ীরা। আর ব্যাংক ঋন পেতে গেলেও রয়েছে কাগজ পত্রাদির নানান জটিলতা। গত এক যুগে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কয়েক হাজার তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।


শাড়ী উৎপাদক আমিনুর রহমান বলেন, শাড়ী বিক্রি ভালোই হচ্ছে। শ্রমিকরাও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে উৎপাদনে লোডশেডিং একটি বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। কাপড়ের দাম খুব একটা বাড়েনি। ক্রেতারা সস্তায় শাড়ী ক্রয় করতে পারছে। তবে শুধু একমাস শাড়ী বিক্রি করে পুরো বছর তাঁত চালানো দুষ্কর।



এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের বেসিক সেন্টার টাঙ্গাইল জেলা লিয়াজু অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে তাঁতের সংখ্যা কমে গেছে। তাঁতীদের সমস্যা মূলত দীর্ঘদিনের। তাদের সমস্যা সমাধানে সরকার চেষ্টা করছে। টাঙ্গাইল সেন্টারের অধিনে ৬টি উপজেলা রয়েছে।


গত ১১ নভেম্বরে তাঁতীদের সমস্যা নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব সমিতির লোকজনের সাথে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় সমিতি ওয়্যারি সুতার উপর ৫ শতাংশের উপরে যে ইমপোর্ট ট্যাক্স আছে তাঁত বোর্ডের প্রস্তাবে ও তাঁতীদের সুবিধার স্বার্থে সরকার তা মওকুফ করে দিয়েছে। ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার জন্য ১৯৯৯ সালের আইনে প্রান্তিক তাঁতীদের সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দিচ্ছে সরকার।


এরপরও সব কিছু ছাপিয়ে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া, বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, গোসাইজোয়াইর, তারটিয়া, এনায়েতপুর, বেলতা, গড়াসিন, সন্তোষ, কাগমারী প্রভৃতি ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্লা-রামপুর, ছাত্তিহাটি, আইসরা, রতনগঞ্জ কোবডোরা প্রভৃতি গ্রামে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর রূচিসম্মত টাঙ্গাইল শাড়ী।


এবারের ঈদ ও পূজার আকর্ষণ হচ্ছে হাইব্রিট, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, গ্যাস, ডেঙ্গু, শপসিল্ক, রেশম, তশর, ফোরফ্লাই, কাতান, শাপাইরা, একতারি দোতারি, মনপুরা, সুতি কুচি ইত্যাদি। এই ঈদে এসব শাড়ী ক্রেতাদের নজর কাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com