শিরোনাম
নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন আমিরার
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১২:০৪
নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন আমিরার
রবিউল হাসান, মাদারীপুর
প্রিন্ট অ-অ+

মাদারীপুরের মেয়ে আমিরা খানম আয়শা নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এ উদ্ভাবনটি চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সেই সাথে উজ্জ্বল করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম।


আমিরা শরীয়তপুর জেড.এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ৩য় বর্ষের ছাত্রী। তিনি মাদারীপুর পৌরসভার শকুনি মহল্লার হামিদ শিকদার সড়কের আহসান হাবিব ও মিনারা খানমের বড় মেয়ে। ২০০৯ সালে মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি (ইলেকট্রনিক্স) পাস করে আমিরা। ২০১৪ সালে শরিয়তপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৬ জেড.এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগে ভর্তি হয়।


চলতি বছর ১২-১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় আমিরা তার সহপাঠি আমির হামজাকে সঙ্গে নিয়ে নৌযানে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে মেলায় প্রদর্শন করে। মেলায় প্রদর্শিত এটি অন্যান্য উদ্ভাবনকে ছাপিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। আমিরার এ উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা, মেধা ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা এবং প্রভাষক জহিরুল ইসলাম।


নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্ভাবিত ওভারলোডিং ইন্ডিকেটরের কাজ হলো- এটি কোনো লঞ্চ বা স্টিমারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে লাইট ও শব্দ সংকেতের (এলার্ম) মাধ্যমে যাত্রীদের জানাবে যে, এই নৌযান অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। একই সাথে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নম্বরে কল চলে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ওজনে না আনা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইন্ডিকেটর সার্কিট থেকে সংকেত দিতেই থাকবে। ঠিক একই সময় নৌযানে স্থাপিত ইন্ডিকেটর থেকে কন্ট্রোল রুমে সেট করা নম্বরে কল চলে যাবে। এটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এ কলের মাধ্যমে লঞ্চ বা নৌযানের ওভারলোডিং-এর বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানা যাবে।



অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা ওজনের কারণে লঞ্চ বা নৌযানটি দুর্ঘটনার কবলে পরে ডুবে যায়; তখনও সার্কিট থেকে কল যেতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে সার্কিট ততক্ষণ পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে থাকবে। শুধু তাই নয় নম্বর ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে ডুবে যাওয়ার আগের লোকেশনও জানা সম্ভব হবে। ফলে উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত হবে এবং যাত্রীদের মৃত্যুঝুঁকি কম থাকবে।


এ সার্কিটে কিছু ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেট ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর সাথে মোবাইল সিস্টেম ব্যবহার করার কারণে এটি অনেকটা সহজলভ্য। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেশের নৌযাত্রা নিরাপদ রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে এ ইন্ডিকেটর তৈরির মূল উদ্দেশ বলে আমিরা দাবি করেছে।


আমিরা বলেন, তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, ইচ্ছাশক্তি, কল্পনা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তা বাস্তবায়নে এ সার্কিটে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছে। আগামীতে আরো আপডেট করে নতুন কিছু সংযুক্ত করার ইচ্ছা আছে তার। যাতে নৌপথে দুর্ঘটনা পুরোপুরি এড়াতে না পারলেও অনেকটা কমে আসবে এবং জীবনের ঝুঁকিও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। উদ্ভাবিত ইন্ডিকেটর সার্কিটটি নৌযানের দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও আমিরার বিশ্বাস।


আমিরা ভবিষ্যতে নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে এমন ধরণের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা করছেন। এ ছাড়াও যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লঞ্চ বা কোনো নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায়, তাহলে জরুরি দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে, এ ধরণের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা মাথায় রেখে গবেষণার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে আমিরা।


বিবার্তা/রবিউল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com