শিরোনাম
নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস বুধবার
প্রকাশ : ২২ মে ২০১৮, ১৫:০০
নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস বুধবার
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নড়াইলের ইতিহাসে একটি ভয়াল দিন ইতনা গণহত্যা দিবস আগামীকাল বুধবার, ২৩ মে। ১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতাকামী ও নিরীহ মানুষের উপর বর্বর পাক হানাদার বাহিনী যে অত্যচার, খুন, ধর্ষন ও গণহত্যা চালিয়ে নারী-পুরুষসহ এ দিনে ৩৯ জনকে হত্যা করে। সেই দুসঃহ স্মৃতিগুলো আজও ভুলতে পারেননি ইতনা গ্রামবাসী।


স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজও শহীদদের স্মরণে সেখানে সরকারি উদ্যোগে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। কবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। এমনকি দিবসটি পালনের জন্য নেয়া হয়নি কোনো সরকারি উদ্যোগ।


মুক্তিযুদ্ধের সময় লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদী তীরবর্তী ইতনা গ্রামের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। যুদ্ধকালীন সময়ে ইতনা হাইস্কুল মাঠে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং এখান থেকেই শত্রুপক্ষের উপর আক্রমনের নানা কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতো। এ গ্রামের উল্টোদিকে মধুমতির ওপারে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চরভাটপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের বৃহৎ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়।


পাকবাহিনী বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ২২ মে দুপুরে চরভাটপাড়া গ্রামে ঢুকে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে। এ সময় মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে চার পাকসেনা আহত হয়।


পাকসেনারা পিছু হটার সময় চরভাটপাড়া গ্রামের কৃষক অনিল কাপালীকে গুলি করতে গেলে গুলি শেষ হয়ে যায়। এ সময় কৃষক অনিল এক পাক সেনার অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে সাঁতার কেটে ইতনা গ্রামে আশ্রয় নেন। ক্ষিপ্ত পাক সেনারা ২৩ মে ভোরে ইতনা গ্রামে এসে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একের পর এক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। এদিন নারী-পুরুষসহ ৩৯ জনকে হত্যা করে পাকবাহিনী। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় নিরীহ মানুষ। সেদিন নিহতদের লাশ দাফনের জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিহতদের স্বজনরা লাশ গোসল না করিয়ে কোনোরকম মাটি চাপা দিয়ে রাখে।


সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি নিহতদের স্বজনরা। লোমহর্ষক সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে আতকে ওঠেন স্বজনরা। নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, কোনো সরকারই শহীদ পরিবারের খোঁজ খবর নেয়নি। শহীদদের কবর পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। অনেক শহীদের কবরের চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে যেতে বসেছে।


জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এস এ মতিন বলেন, ইতনা গণহত্যা দিবস নড়াইলের ইতিহাসের একটি জঘন্যতম ঘটনা হলেও এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নেই, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডা ইউনিট সাবেক কমান্ডার এস এম গোলাম কবীর বলেন, ইতনা গণহত্যার ইতিহসার সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছি। দ্রুত যদি গণকবরসহ ইতিহাস সংরক্ষণ করা না হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখানকার সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না।


বিবার্তা/শরিফুল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com