৬ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর থেকে স্কুলের বারান্দায়, গাছ তলায় ও খোলা আকাশের নিচে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে।
আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমে গেলে বিদ্যালয়ের একটি মাত্র কক্ষে কোনো রকমের আশ্রয় নিচ্ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতী শিক্ষার্থীরা। খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন মহলে বার বার বিষয়টি জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের ছোট বড় তিনটি ভবনের মধ্যে দুটি ভবন ৬ বছর আগে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বাকি একটি ২ রুম বিশিষ্ট ভবনে একটি কক্ষে অফিস রুম এবং একটি কক্ষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য। আর এই একটি রুমের বিপরীতে এখানে ছয়টি শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫শত।
আর ৬ বছর যাবৎ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায়, গাছের নিচে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তৈরি করা একটি টিন সেডের ঘরে (একচালা বিশিষ্ট টিনের ঘর) চলছে পাঠদান। ঘরটির চারিদিকে কোনো বেড়া না থাকায় বৃষ্টি হলে এখানেও ক্লাস করতে পারে শিক্ষার্থীরা।
মরিচপাশা গ্রামের আবদুল্লা জানান, বার বার উপর মহলে জানানোর পরও ভবন নির্মাণ না করায় ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে গত বছর একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। টাকার অভাবে এখনো সেই ঘরের চারিদিকে বেড়া দেয়া হয়নি। ছেলেমেয়েরা এখানে অনেক কষ্ট করে লেখোপড়া করে। এই ঘরের মধ্যে দুই পাশে দুই শ্রেণীর ক্লাস নেয়া হয়। এতে ছেলেমেয়েরা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না।
লিটু সরদার নামে এক অভিভাবক জানান, তাদের সন্তানকে এই বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে তারা অনেক আতংকে থাকেন। আকাশে মেঘ হলেই ক্লাস বন্ধ থাকে। এতে তার সন্তানের মতো অন্য ছেলেমেয়েরও লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরণ্য, হাফসা, সেতু জানায়, আমরা রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ক্লাস করতে পারি না। আশেপাশের শব্দে পড়াশোনায় মন বসে না। বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় খোলা জায়গায় পড়ালেখা করতে হচ্ছে। যে কোনো সময় গাছের ডালপালা ভেঙ্গে এবং ঝড়-বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে তাদের বই খাতা ভিজে যায়। ক্লাস করতে এসে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ্ও হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শুকনো মৌসুমে গ্রামের একটি বাঁশঝাড় তলায় ক্লাস নেয়া হয়। সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে, বৃষ্টি হলেই কাঁদা হয়। আশপাশের বাগান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে।
শিক্ষকরা জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং ফলাফল অনেক ভাল, যার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের এভাবে ক্লাস নিচ্ছেন তারা। আর এখন বর্ষা মৌসুমে আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যালয়ে আসে না শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি হলে ক্লাস নেয়া বন্ধ রাখতে হয় বাধ্য হয়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিনা আক্তার সাথী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর কোনো ভবন তৈরি না করে গত বছর দুটি ভবনই নিলাম করা হয়েছে। বর্তমানে ছেলেমেয়েদের জন্য একটি মাত্র রুম আছে। গত বছর এই বিদ্যালয় থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। যার মধ্যে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ১৪ জন। ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতে লেখাপড়ার ক্ষতি না হয় সেজন্য বারান্দায়, খোলাস্থানে এবং টিনের ছাবড়ায় ক্লাস নেয়া হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাতি মান্নান সরদার বলেন, বারবার উপর মহলে জানানো হলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা গ্রামবাসী চেষ্টা করে একটি টিন সেডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দ্রুত ভবন নির্মাণ না হলে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।
লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে এই বিদ্যলয়ের শিক্ষার মান অনেক ভাল। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। দ্রুত বিদ্যলয়ের ভবন নির্মাণের প্রয়োজন মনে করে তিনি বলেন, সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহ আলম জানান, জেলায় এ ধরনের বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখতে আপাতত টিনসেড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য উপর মহলে তালিকা পাঠানো হয়েছে। ভবনের বরাদ্দ পেলে আর সমস্যা থাকবে না।
বিবার্তা/শরিফুল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]