শিরোনাম
বধূ সাজা হলো না শাহিনার
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ২১:৩৭
বধূ সাজা হলো না শাহিনার
মেয়ে শাহিনা আক্তার এবং মা রোকেয়া বেগম
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার :
প্রিন্ট অ-অ+

মৌলভীবাজারে রাজনগরের বুজবল গ্রামে ঘুমন্ত অবস্থায় বসত ঘরে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুন লেগে মা রোকেয়া বেগম ও মেয়ে শাহিনা আক্তারের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন ছেলে মুন্না অজিজ। এখন তিনি মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।


কিছু দিন পূর্বে হারিয়েছেন বাবাকে। সেই শোক কাটতে না কাটতেই এখন হারালেন মা আর ছোট বোনকে। মুন্না আজিজ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বিবিএ ১ম বর্ষের ছাত্র। বৃহস্পতিবার দুপুরে বোন শাহিনাকে দেখতে আসার কথা ছিল ইতালি প্রবাসী বর পক্ষের। কিন্তু রাতেই আগুনে পুড়ে মরা যান শাহিনা। আর তাই বধূ সাজা হলো না তার।


বুধবার রাত আড়াইটা দিকে রাজনগর উপজেলায় ভুজবল গ্রামের রোকেয়া বেগমের আধাপাকা বসত ঘরে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনে লাগে। পরে মৌলভীবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।


এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো দরজা জানালা বন্ধের পর ঘরের প্রধান ফটকে লোহার গেইটে তালা লাগিয়ে পরিবারের ৩ সদস্য মা, মেয়ে ও ছেলে একটি টিন সেডের ঘরের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত অনুমান ২টার দিকে হঠাৎ বৈদ্যুতিক সট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে বের হওয়ার জন্য ঘরের ভেতর ছুটাছুটি করেন এবং এক পর্যায়ে তারা বারান্দায় প্রধান ফটকে তালা দেয়া লোহার গেইটের কাছে এসে চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসেন।


সূত্রে আরো জানা যায়, পরে এলাকাবাসী লোহার গেইট ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে মৃত ওয়াছির মিয়ার বড় মেয়ে শাহিনা বেগম মরদেহ ঘরের মেঝে পরে থাকতে দেখতে পান। মা রোকেয়া বেগম ও ছেলে মুন্না আজিজকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় মা রোকেয়া বেগম মারা যান।


এ দিকে মেয়ে শাহিনা আক্তারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর গুরুত্বর আহত মুন্না আজিজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।


আহত মুন্না অজিজকে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে


মর্মান্তিক এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আকস্মিক এমন অগ্নিকাণ্ডে মা মেয়ের মৃত্যুতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও ভয় বিরাজ করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ভুজবল গ্রামের প্রবাসী ওয়াছির মিয়া গত একবছর আগে দেশে ফিরে এলে স্ট্রোক করে মারা যান। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলে মুন্না আজিজ ও মেয়ে শাহিনা আক্তার ছিলেন বিয়ের বাকি। শাহিনা আক্তার মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং ভাই মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন। শাহিনা আক্তারকে তার ভাই মুন্না বুধবার বিকালে নানার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রাম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরেই ঘটে মর্মান্তিক এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।


প্রতিবেশী শামছুল হকের সঙ্গে বিবার্তা প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, গভীর রাতে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন। তখন দেখতে পান রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার কলাপসিবল গেটের সামনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। তিনি সামনে যেতেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার বাঁচানোর আকুতি জানান। এসময় তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। বেরিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন। কলাপসিবল গেটে তালা দেয়া থাকায় দরজা খোলা যাচ্ছিল না। ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিলো। পাশের বাড়ির একজন শাবল নিয়ে আসেন। এর আগেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তারের গায়ে আগুন ধরে যায়। গেটের তালা ভাংতে ভাংতেই পুড়ে যান মা মেয়ে। তালা ভেঙ্গে যখন বের করা হয় তখন তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছেন।


শামছুল হক আরো জানান, তার পরনে হাফ পেন্ট থাকায় লুঙ্গি খুলে তাদেরকে ধরে ঘর থেকে বের করেন। তখনই মারা গেছেন শাহিনা আক্তার। এদিকে ভাই মুন্না আজিজ ঘরের পূর্ব পাশের বাথরুমে ঢুকে পানি ঢালতে থাকেন। এ সময় তার পিঠ ও বাঁ শরীরের পাশ পুড়ে গেছে। তাকেও বের করে নিয়ে আসেন। পরে এম্বুলেন্স আসলে মুন্না আজিজ ও মা রোকেয়া বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এলাকায় রোকেয়া বেগম মারা যান। পরে তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয় এবং মুন্না আজিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।


তিনি জানান, ভোরে শাহিনা আক্তারের লাশ রাজনগর থানা পুলিশ মৌলভীবাজার মর্গে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে মা মেয়ের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রোকেয়া বেগমের ভাই দুবাই থেকে দেশে আসার পর শুক্রবার লাশ দাফন করা হবে।


রাজনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বিবার্তাকে জানান, ফ্রিজের পাশে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে কমপ্রেসার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘরে আগুন লেগে যায়। সে আগুনে দগ্ধ হয়েই তারা মারা যান। মা, মেয়ের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে।


বিবার্তা/আরিফ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com