শিরোনাম
অব্যাহত দখল আর দূষণের শিকার টাঙ্গাইলের নদী-খাল-বিল
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:৪৯
অব্যাহত দখল আর দূষণের শিকার টাঙ্গাইলের নদী-খাল-বিল
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের নদী ও খালবিলগুলো ক্রমাগতভাবে বেদখল হয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। তার ওপর এসব নদী দূষিতও হচ্ছে অবিরত। মিল-কারখানার বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে জলজ প্রাণি প্রায়ই মরে নদীতে ভেসে উঠছে। এমনকি স্থানীয়দের অসচেতনতা ও প্রভাবশালীদের দখলের প্রতিযোগিতায় নদী-খালগুলো ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও আবাদি জমিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।


স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল দিয়ে বয়ে যাওয়া ১০টি বড় নদীর মধ্যে শুধু যমুনা এখনও তার প্রমত্ততা ধরে রেখেছে। ধলেশ্বরী, বংশাই, লৌহজং, খিরু, যুগনী, ফটিকজানি, এলেংজানি, লাঙ্গুলিয়া ও ঝিনাই এবং শাখা নদীগুলো দখল আর দূষণে খালে পরিণত হচ্ছে। অথচ এসব নদীগুলোই এক সময় জীবনাচারের নিত্য সঙ্গী ছিল। ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝিনাই ও বংশাই নদী। বাসাইলের লাঙ্গুলিয়া নদী, মধুপুরের টোকনদী, গোপালপুরের বৈরান নদী, কালিহাতীর নিউ ধলেশ্বরী, এলেংজানি, ফটিকজানি, মির্জাপুরের বংশাই এক সময় ছিল খরস্রোতা।


প্রমত্তা এসব নদী দিয়ে মহাজনী নৌকা চলাচল করত। নদী পাড়ের জেলেসহ অনেকেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এসব নদীর অধিকাংশই পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ স্বত্তেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে নদীর বেশিরভাগ জায়গা। নদী দখল করে কোথাও পাকা ইমারত, কোথাও ইটভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, এমনকি আবাদি জমি বানিয়ে রীতিমত ধান চাষ করা হচ্ছে!



বংশী বা বংশাই নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। এটির দৈর্ঘ্য মোট ২৩৮ কিলোমিটার। নদীটি জামালপুর জেলার শরীফপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলা অতিক্রম করে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি সাভারের কর্ণতলী নদীর সাথে মিলে কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে আমিনবাজারে এসে তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তুরাগ নদী আরো কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশেছে। বংশাই নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার। এ নদী চারটি জেলা যথাক্রমে জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা এবং ১০টি উপজেলা যথাক্রমে জামালপুর সদর, মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, বাসাইল, মির্জাপুর, সখিপুর, কালিয়াকৈর, ধামরাই, সাভার এবং ৩২১টি মৌজার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।


ঝিনাই নদী শেরপুর, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৩৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং-২১। ঝিনাই নদী জামালপুরের বাউশী থেকে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি শাখা ডানদিকে বেঁকে যমুনার পূর্ব পাশ দিয়ে ভূঞাপুর উপজেলার ৭ কিমি. দক্ষিণ-পশ্চিমে কালিহাতী উপজেলার যোকার চরে ধলেশ্বরীর উৎসমুখের কাছে মিলিত হয়েছে। অপর শাখা দক্ষিণ-পূর্বমূখী হয়ে বাসাইল উপজেলার ফুলকী হয়ে বংশাই নদীতে পতিত হয়েছে। অন্য অংশ দক্ষিণমুখী হয়ে বাসাইলের ফুলকী-আইসড়া, দেউলী, দাপনাজোর, নথখোলা হয়ে দক্ষিণমুখী হয়েছে।



প্রমত্তা যমুনা-ধলেশ্বরী বেষ্টিত ব’দ্বীপ বিশেষ নাগরপুর উপজেলা। এ উপজেলাকে ঘিড়ে জনশ্রুতি রয়েছে, সুলতান মাহমুদশাহ’র শাসনামলে নাগরপুরের মামুদনগর ছিল তাঁর রাজধানী। সেখানে তাঁর একটি বিশাল এক নৌঘাটি ছিল। বিদেশি শত্রুর আক্রমনের হাত থেকে ওই অঞ্চলকে রক্ষা জন্যেই স¤্রাট মাহমুদ শাহ ওই নৌ ঘাটি নির্মাণ করেছিলেন। এক সময় বর্তমান সিরাজগঞ্জের চৌহালীর পূর্বাংশ- নাগরপুর এবং দৌলতপুরের অংশ বিশেষসহ পুরো এলাকা ছিল নদী এলাকা। তবে কালের বিবর্তনে ওই এলাকা চর এলাকায় রূপ নেয়। নাগরপুরের নোয়াই নদীর দুই পাড় ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে।


মির্জাপুরের হাটুভাঙ্গা এলাকায় নদী দখল করে ১০-১৫টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। বাসাইলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশাই নদীর দুই পারে গড়ে উঠেছে ইটভাটা আর রাইসমিল। লাঙ্গুলিয়া নদী পাড়ের বিশাল এলাকা জুড়ে বানানো হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। অনেক জায়গায় বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। কালিহাতীর বংশাই, সাপাই, ঝিনাই, ফটিকজানি, লাঙ্গুলিয়া ও নাংলাই নদীর দু’পাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘর-বাড়ি, মিল, কারখানা ইত্যাদি।



গোপালপুর উপজেলা সদরের বৈরান নদীর অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। শুস্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে পুরোটাই বোরোর আবাদ হয়। গোপালপুর পৌরসভার অংশে নদীর উভয় পাড় দখল করে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে ভূমিদস্যুরা।


এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ জানান, ধলেশ্বরী, নিউ ধলেশ্বরী, লৌহজং, এলেংজানি, ঝিনাই নদীতে প্রতিবছর পলি জমে। ওই পলি কেটে নেয়া এবং অপরিকল্পিতভাবে মাটি-বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়। নিউ ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত অবাধ পানি পবাহ নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘বুড়িগঙ্গা নদী খনন প্রকল্প’ গ্রহন করা হয়েছে। নদী খনন করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডারও দেয়া হয়েছে, দ্রুতই কাজটি শুরু হবে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com