শিরোনাম
ইউএনও’র বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:১৬
ইউএনও’র বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সম্প্রতি নির্মিত গুচ্ছগ্রাম, ছবি : মাহমুদুন নবী
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মাগুরা শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সূমি মজুমদারের বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে সরকারি তহবিলের ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।


জানা গেছে, মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার পোড়াগাছি নামক স্থানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিডিআরপি প্রকল্পের অধীনে গৃহহীন লোকদের জন্য গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার নগদ ৩১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মাটির কাজের জন্য ৩৬.৬৭ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করে।


প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী মজুমদারকে সভাপতি, শালিখা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সামশুল আরেফিনকে সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিরাজ হোসেনকে টেকনিক্যাল মেম্বারসহ নির্বাহী কমিটির ৭ জনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব আহম্মেদ নামে একজনকে ঠিকাদার নিয়োগ করে ঐ গুচ্ছ গ্রামের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে সরকারের দেয়া পুরো টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনতা ব্যাংক আড়পাড়া শাখায় তার নামীয় হিসাবে জমা করেন।


প্রকল্প বাস্তবায় কমিটির অন্য কোনো কর্মকর্তা ও সদস্যর সাথে আলোচনা ছাড়াই ইউএনও নিজের ইচ্ছে মতো ৯টি চেকের মাধ্যমে প্রকল্পের পুরো টাকা উত্তোলন করে নিজ হেফাজতে রেখে খরচ করেন। প্রকল্পের আওতায় ২০টি টিনের ঘর, পায়খানা, রান্নাঘর ইত্যাদি ৫ এপ্রিল সম্পন্ন দেখিয়ে ইউএনও মাগুরা জেলা প্রশাসকের দফতরে বিল-ভাউচারসহ সমাপ্তি প্রতিবেদন জমা দেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি মজুমদার ঠিকাদারের পাওনা টাকার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১০ কিস্তিতে ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেন এবং ঠিকাদারের বাকি পাওনা থাকে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ঠিকাদারের পাওনা টাকা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরোধ বাঁধলে ইউএনও’র গোমর ফাঁস হয়ে যায়। কোনো ঠিকাদারী কাজ বা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিলের টাকা কাউকে নগদ পরিশোধ করার নিয়ম না থাকলেও নিজ স্বার্থে তা করেছেন ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।


সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, ইউএনও গুচ্ছগ্রামে মাটির কোনো কাজ না করে ৩৭ মেট্রিকটন চালের ডিও বাজারে বিক্রি করেছেন যার মূল্য ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অপর দিকে ঠিকাদারের দাখিলকৃত বিলের টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার নিয়ম থাকলেও তিনি নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ৮/১০ কিস্তিতে ঐ টাকা নগদ প্রদান করেন। সরকারের বরাদ্দকৃত ৩১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঠিকাদারের বিল প্রদান করে বাকী ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং চাল বিক্রির ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকার কাজ করে বাকী ১০ লাখ টাকাসহ মোট ১৭ লাখ টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন।


এছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির উন্নয়নে শিক্ষাবৃত্তি, গাভী পালন, অগভীর নলকূপ স্থাপন ও সেলাই মেশিন বাবদ বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ টাকা বিতরণে অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়া ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় কতিপয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সহায়তায় শ্রমিকদের দেনা পরিশোধ না করে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে তার ব্যাংক হিসাবে জমা করে রেখেছেন।


এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এসব অপকর্ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট সকল বিল ভাউচার, কাগজপত্র জব্দ করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।


এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন।


শালিখা থানা পিআইও মিরাজ হোসেন ও এসি ল্যান্ড সামশুল আরেফিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, নামেমাত্র তাদেরকে সদস্য সচিব ও টেকনিক্যাল পারসন হিসেবে রাখা হয়েছিল। কোনো কাজের বিষয়ে ইউএনও তাদেরকে কোনো কিছুই জানাননি।


অভিযুক্ত ইউএনও সূমি মজুমদার এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন।


বিবার্তা/নবী/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com