শিরোনাম
ভাটায় ইট ছোট করে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৩৮
ভাটায় ইট ছোট করে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ইটভাটা মালিকরা ইটের সাইজ ছোট করে বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নির্ধারিত মাপের চেয়ে ছোট করে যাচ্ছেন। এর ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। লঙ্ঘিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন।


অভিযোগ রয়েছে, অবকাঠামো নির্মাণের শুরুতেই প্রকৌশল বিশেষজ্ঞদের দেয়া ড্রয়িং বা ডিজাইন ও পরিমাপগত নির্দেশনা মতো কাজ শুরু করার পরই ঘটে বিপত্তি। পূর্ব নির্ধারিত প্রাক্কলন ব্যয়ের সাথে অসংগতি হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ সংকুলান করতে গিয়ে চরম বিপত্তির মুখে পড়তে হয়।


স্থানীয়রা বলেন, ইটের সাইজ এত ছোট যে, চাহিদার তুলনায় ইট বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। অথবা বালি সিমেন্টে খরচ বেশি পড়ছে। প্রতি বছরই ইটভাটা মালিকরা অতি লাভের আশায় ইটের সাইজ ছোট করেন।


তাদের অভিযোগ, ছোট সাইজের ইটের ফর্মা তেরি করা হয় হামিকপুর ফুটানি বাজারের আজিজুলসহ অনেক মিস্ত্রির কাছ থেকে মালিকরা মাপের চেয়ে ছোট সাইজের ইটের ফর্মা তেরি করেন।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পার্শ্ববর্তী স্বরূপপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম, আব্দুস ছাত্তার, বজলুর রহমান কটা, সাদীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মামুন, হজমদ্দিন, বেগুনবাড়িয়া মাঠে আবু বক্কর, ডাংমড়কায় আজাদ খন্দকার, ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, শরিফুল, আদাবাড়িয়া গ্রামের উজ্বল ও জুলহাস, রিফায়েতপুর জদ্দারপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওলি, দৌলতপুর হাসপাতাল সড়কে জহুরুল আলম, ইয়াছিন আলী, চকদৌলতপুর রমজান আলী, দৌলতপুর চন্দপাড়া ও ঝাউদিয়ায় নজরুল ইসলাম, নারানপুরে আব্দুস সালাম এবং বড়গাংদিয়া হাবলু মোল্লা প্রমুখ।



সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, সরকারি মাপ অনুযায়ী একটি ইটের সাইজ হতে হবে সাড়ে ৯ ইঞ্চি, সাড়ে ৪ ইঞ্চি এবং পৌনে ৩ ইঞ্চি বা ১১৭ দশমিক ৫৬ ঘন ইঞ্চি। কিন্তু বাস্তবে ইট প্রস্তুতকারী ভাটা মালিকরা যেসব ইট ক্রেতা বা ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করছেন তা অধিকাংশই ৯৫ থেকে ৯৮ ঘন ইঞ্চি। এতে প্রকৌশলীরা ড্রয়িং ডিজাইন ধরে যত নিখুত এস্টিমেটই করুন না কেন কোনো লাভ হবে না। তারা অতি মুনাফা বা বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতেই নির্ধারিত মূল্য নিলেও ছোট সাইজের ইট দিয়ে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন।


আর এই কারণে ভোক্তাদের অবকাঠামো নির্মাণে অন্যান্য উপকরনের উপরেও প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া এলজিইডি অফিসের ল্যাব ইনচার্জ প্রকৌশলী তানভির আহমেদ।


অপরদিকে ইটের সাইজ ছোট করার সত্যতা নিশ্চিত করে জুলহাস নামে এক ইটভাটা ভাটা মালিক বলেছেন, ব্যবসায়ের সুবিধা ও বাড়তি লাভ করতেই ভাটা মালিকরা ইটের ফর্মা ছোট করে থাকে।


ইটের মাপ নির্ধারিত মাপের চেয়ে ছোট করে ভোক্তা অধিকার আইন লংঘন করে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন ভাটা মালিকরা এমন কথা স্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা মো. সেলিমুজ্জামান।


দৌলতপুর উপজেলায় অবৈধ ২টি ড্রাম চিমনির ইটভাটাসহ অনুমোদহীন ২৪টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতি মৌসুমে এক একটি ইটভাটায় গড়ে ২৫ লক্ষ ইট উৎপাদান করে ভোক্তাদের কাছে তা বিক্রয় করেন মালিকরা। ইটের নির্ধারিত সাইজ বা মাপ ছোট করে একটি ইটের দাম সাড়ে ৭টাকা থেকে ৮টাকা হিসেবে একটাকা ৩১ পয়সা ভোক্তাকে ঠকিয়ে এক মৌসুমে মোট উৎপাদিত প্রায় ছয় কোটি ইট বিক্রয় করে ভাটা মালিকরা শুধুমাত্র ইটের সাইজ ছোট করে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভোক্তাদের কাছ থেকে। আর দৃশ্যমান প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অবকাঠামো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ভোক্তাগণ।


তবে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট পুড়ানোর দায়ে কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ভাটা মালিকদের অর্থদণ্ড প্রদান করলেও ইটের সাইজ ছোট করার দায়ে কোনো ইটভাটা মালিকদের দণ্ড দেননি চলতি মৌসুমে।


বিবার্তা/শরীফুল/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com