শিরোনাম
কুষ্টিয়ায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধানে শুধুই চিটা
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:২৯
কুষ্টিয়ায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধানে শুধুই চিটা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার মাঠজুড়ে সোনালী ধানের দোলা। ক’দিন বাদেই এই ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্ন যেন ফিকে হতে চলেছে। কারণ ওই ধান দানাছাড়া। দুর থেকে ধানে দানা মনে হলেও বাস্তবে তা শুধুই চিটা।


হঠাৎ করেই ধানে এমন দশা হলেও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতা কিংবা এ বিষয়ে কোনো পরামর্শও দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ কৃষকদের।


এমন অবস্থায় মাথায় হাত কুষ্টিয়ার সহস্রাধিক কৃষকের। ঠিক কি কারণে ধানে এমন হয়েছে তা কৃষক আঁচ করতে না পারলেও কৃষি বিভাগ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পরাগায়নজনিত কারনে এমন হতে পারে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিমুলিয়া মৌজার স্বর্গপুর মাঠের সোনালি ধানে ভরা ক্ষেত। এই মাঠে সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে শোভা পাচ্ছে মিনিকেট কিংবা আটাশ জাতীয় ধানের ক্ষেত। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সোনালি ধানের মনোরম দৃশ্য যেন মন ভরিয়ে দেয়। দুর থেকে দেখলে যেকোনো কৃষকের মন ভরে যাবে। ক’দিন বাদেই উঠবে কৃষকের ঘরে ধান। অথচ এই ধানেই কোনো দানা নেই। শুধুই চিটা।


সপ্তাহ দু’য়েক আগে কিছু জমিতে এমন প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও দু’দিনের ব্যবধানে তা পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। জমিতে এমন অবস্থা দেখা দেয়ায় তাই এলাকার কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।



স্বর্গপুর এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, এবারের বোরো মৌসুমে তিনি সাত বিঘা জমিতে মিনিকেট জাতীয় ধানের আবাদ করেছেন। শুরুতে ব্যাপক পরিচর্যায় ধান ফলন উপযোগী করে তুললেও শেষ মুহুর্তে ওই ধান দানাশূন্য হয়ে পড়েছে। ধানে শুধুই চিটা। ধান ক্ষেতে এমন দশা দেখে নির্বাক হয়েছি। ঠিক কি কারণে এই চিটা হয়েছে তাও জানি না। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আগাম কোনো বার্তাও পাইনি। কোনো কৃষি কর্মকর্তাকেও আমরা পাইনি ঠিকমত।


তিনি জানান, বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মন ধান পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে এক মন ধানও পাওয়া যাবে না।


একই এলাকার মজিবর রহমানের আট বিঘা জমির ধানেও একই অবস্থা। আইলচারা মাঠের শাহাদৎ নয় বিঘা জমিতে মিনিকেট আটাশ জাতের ধান রোপন করে আজ তিনি সর্বশান্ত হওয়ার পথে। তারও অভিযোগ, কৃষি বিভাগের গাফিলতিতে তারা সর্বশান্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পেয়ে নিজেরাই বিভিন্ন ওষুধ দিয়েছেন তারা জমিতে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।


তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, এটি নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ নয়, ঝড়ে ধানের ফুল ঝরে যাওয়ায় পরাগায়নে সমস্যা হয়েছে। কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বর্গপুর মাঠে পরিদর্শনে গিয়ে এমনটিই জানিয়েছেন।


সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন জানান, আমাদের সার্বক্ষণিক তদারকি রয়েছে মাঠে। যখন ধানের ফুল থেকে পরাগায়ন হবার কথা ঠিক তখনই সেই ফুল ঝড়ে ঝরে পড়ে যায়। এর ফলে পরাগায়ন না ঘটায় ধানে দানা হয়নি, চিটা হয়েছে। তবে যেসব ধানে এমন অবস্থা হয়েছে সেগুলো স্বাভাবিক না হলেও নতুন করে যাতে করে এমন অবস্থা না হয় সে ব্যাপারে আমাদের তদারকি রয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। অবশ্য নেক ব্লাস্টসহ অন্য কোনো সমস্যায় এমন অবস্থা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই জানা যাবে।


ওই কৃষি কর্মকর্তার দাবি, খুব বেশি নয়, ৮-১০ হেক্টর জমিতে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে।


শুধু সদর উপজেলাতেই নয়, ধানে এমন অবস্থা হয়েছে কমবেশি জেলার প্রায় সব ক’টি উপজেলাতেই। বিশেষ করে মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় এমন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।


বিবার্তা/শরীফুল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com