শিরোনাম
লামায় জলকেলির মধ্য দিয়ে শেষ হলো বৈসাবি
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৩১
লামায় জলকেলির মধ্য দিয়ে শেষ হলো বৈসাবি
লামায় জলকেলি উৎসবে মেতেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরনো বছরের সব দুঃখ, অবসাদ দূর করে শুদ্ধ মনে নতুন বছর শুরুর আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেন বান্দরবানের লামা উপজেলার মারমা জনগোষ্ঠী।


মার্মা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব এ সাংগ্রাইকে ঘিরে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি পল্লীগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। এ উপলক্ষে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা-পুলি তৈরি প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে।


সারা রাত পিঠা তৈরি করে পরের দিন সকালে পাড়ার প্রতিবেশী, আত্মীয় সজন ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভিক্ষুদের উদ্দেশে পাঠানো হয়। রবিবার থেকে জলকেলি খেলায় মেতে উঠে মারমা তরুণ-তরুণীরা। উৎসবে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাঙ্গালী তরুণ-তরুণীরাও। বৃহস্পতিবার এ উৎসব শেষ হয়।


বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌরসভা এলাকার বড়নুনারবিল পাড়ায় অনুষ্ঠিত সাংগ্রাইং জলকেলি উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন - উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি। এ সময় পৌরসভা মেয়র জহিরুল ইসলাম, ওসি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


প্রধান অতিথি নূর-এ-জান্নাত রুমি জল ছিটিয়ে জলকেলি উৎসবের উদ্বোধন করেন। অন্যদিকে ৫দিন ধরে ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোতে চলেছে ধর্ম দেশনা। শীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা দানীয় দ্রব্য (মিষ্টান্ন, ফলমূল) দান, হাজার মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানান বৌদ্ধধর্মালম্বীরা। পানিকে বিশুদ্ধতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পবিত্র করে নেয়। পুরোনো বছরের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তারা। জলকেলি প্রতিযোগিতায় শুধু অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরা অংশ নেয়।


লামা পৌরসভা বড়নুনারবিল পাড়া ও মাস্টার পাড়ার উৎসব ঘুরে দেখা যায়, ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নতুন আকর্ষণীয় পোষাক পরে সেজেগুজে জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে গিয়ে একে অপরকে পানি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি চলেছে নাচ-গানের আসর। ঢাকঢোল আর কাঁসার তালে তালে নেচে আনন্দ প্রকাশ করছে সবাই। একই ভাবে উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া, গজালিয়া ইউনিয়নের গাইন্দ্যা পাড়া, পৌরসভার ছোটনুনারবিল পাড়াসহ সব কটি ইউনিয়নে উৎসব পালন করেন মারমা জনগোষ্ঠিরা।


একাধিক তরুণ-তরুণীরা বলেন, এই উৎসবে আমরা তরুণ-তরুণীদের নিয়ে জলকেলি খেলা উপভোগ করে থাকি। এদিকে তরুণ তরুণীদের পাশাপশি শিশুরাও উৎসবে মেতে উঠেছে। শিশুরা দলবেঁধে টমটম, রিক্সা ভাড়া নিয়ে শহরের রাস্তয় রাস্তায় পথচারি আর উপস্থিত অতিথিরা আনন্দ উপভোগ করছেন।


পৌরসভা এলাকার বড়নুনারবিল পাড়ার বাসিন্দা মংছিংপ্রু মার্মা ও বাবু মং মার্মা বলেন, জলকেলি উৎসবের জন্য পুরো একটি বছর অপেক্ষায় ছিলাম। এ উৎসবের শেষ দিন সত্যি বেশ মজা করেছি।


পৌরসভা এলাকার বড় নুনারবিল পাড়া সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ক্যচিংমে মার্মা জানান, বৈসাবি আমাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এ উৎসবে বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, জলকেলী, পিঠা তৈরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকি। এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো পানি খেলা। এর মাধ্যমেও ছেলে মেয়েরা উভয়েই আনন্দ করে থাকেন।


এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে উপজেলায় বৈসাবি উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পাড়ায় পুলিশি টহলও জোরদার ছিল। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/আরমান/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com