হলি আর্টিজানে হামলার অনেক আগেই বাড়ি ছেড়েছিল নব্য জেএমবির সদস্য হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে আবু ওয়াক্কাস। তার পরিবার ও গ্রামের লোকজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে ২০১৩-১৪ সালে জেএবি নেতা তামিমের হাত ধরে জঙ্গি দলে নাম লেখায় সাগর। গ্রামের মানুষের কাছে একজন ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল সে। যদিও গ্রামে সাগর নামে তাকে কেউই চেনে না। বুধবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে কখনো ধরা পড়েনি সাগর।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পলিকাদোয়া কয়রাপাড়া গ্রামের পল্লি চিকিৎসক হারুনুর রশিদ ও আছিয়া খাতুনের ৫ সন্তানের মধ্যে সাগর দ্বিতীয়। গ্রামের মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করলেও আলিম ফেল করে সে। অভাবের সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকত। এ নিয়ে মায়ের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সাগর। বাড়িতে আর ফিরবে না বলেও জানায়।
পরবর্তীতে ঢাকায় একটা কোম্পানিতে সে চাকরি করে বলে পরিবারকে জানায়। এরপর মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত। কিন্তু বাবা-মাকে কোনো টাকা পয়সা দিত না। একপর্যায়ে যোগাযোগও বন্ধ করে দেয় সাগর।
গ্রামেই একটা ছোট মুদির দোকান চালান সাগরের মা আছিয়া খাতুন। বাবা একটা ছোট ওষুধের দোকান চালালেও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন চলাফেরা করতে পারেন না সাগরের বাবা ডা. হারুন।
সাগরের মা আছিয়া খাতুন জানান, তার দুই ছেলের কেউই তাদের দেখাশুনা করেন না। তারপরও সাগরকে অনেক খুঁজেছেন তারা। ২০১৬ সালে পুলিশ সাগরের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে এবং বেশকিছু তথ্য নেয় তার কাছ থেকে। ছেলের নিখোঁজে থানায় জিডিও করেন সাগরের মা আছিয়া খাতুন। কিন্তু পুলিশ কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। তবে মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের বাড়িতে আসত এবং বিভিন্ন ধরনের কথা-বার্তা বলত। কেউ কেউ টাকা পয়সাও দাবি করত বলে জানান সাগরের মা।
সাগরের চাচি কবিতা খাতুন জানান, সাগর সবার সাথে মিলেমিশে থাকত। তার ব্যবহার খুব ভালো ছিল।
প্রতিবেশি ইসতামুল, আবদুস সবুরসহ কয়েকজন জানান, হাদিসুর খুব শান্ত ছেলে। নিয়মিত নামাজ পড়ত এবং সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করত। সে জঙ্গি দলের সদস্য এমন কোনো কাজ বা আচরণ কারো সাথে করেনি। সংবাদ মাধ্যমে তারা জানতে পারেন হাদিসুর জেএমবি সদস্য এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হাদিসুর ওরফে সাগর বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর কুষ্টিয়া এলাকায় বসবাস করতো। পরে সে পাবনায় বিয়ে করে। তার মা জানান একবার বউকে নিয়ে এসেছিরো সাগর। তাও অনেক আগে। সে কোথায় থাকত, কী করত কিছুই জানায়নি।
বেশ ক’বছর ধরেই পুলিশ এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণদের একটা তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে। কিন্তু কারো কোনো খবরই বের করতে পারেনি তারা। হাদিসুর ধরা পড়ার আগে তার সম্পর্কে কোনো তথ্যই ছিল না পুলিশের কাছে। তবে সে যে জঙ্গি দলের সদস্য সেটা অনেক আগেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।
জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, হাদিসুরের সম্পর্কে তারা অনেক আগেই অনুমান করেছিল সে জঙ্গি দলে আছে। তবে খুঁজে বের করতে পারেননি তারা। পুলিশ হাদিসুরের বাবা ডা. হারুনকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে হাদিসুর জেএমবি দলে যোগ দিতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না।
দীর্ঘদিন ধরে পলাতক হাদিসুর হলি আর্টিজানে হামলার সমন্বয়ক এবং অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে পুলিশের কাছে চিহ্নিত। ২১ মার্চ রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে জেএমবি নেতা তামিমের হাত ধরে জেএমবিতে যোগ দেয় সাগর। বিভিন্ন সময় নাম পরিবর্তন করায় তাকে কেউ চিনতে পারেনি। সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জেলা থেকে তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যমতে সাগরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিবার্মা/শামীম/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]