টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে দুইটি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে ও নদীর বুকে জেগে উঠা চরে পাঁচটি বেকু দিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অবৈধভাবে দিনরাত মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি একাব্বর হোসেন এর পিএস উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শামিম আল মামুন এর নেতৃত্বে প্রভাব খাটিয়ে তিন মাস যাবত মাটি উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমপি ও তার পিএস এর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। ইতিমধ্যে যারা প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি নানা প্রকার হয়রানিমূলক মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সূত্র মতে, মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের রশিদ দেওহাটা গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বংশাই নদী। সেই নদীতে নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার বসিয়ে ও পার্শ্ববর্তী জোগির গোপা চরে পাঁচটি বেকু বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। তারপর সেই বালু ড্রামট্রাক দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়ন (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান তালুকদার, উপজেলা বিএনপি’র সদস্য আব্দুর রৌফ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও যুবদল নেতা কামরুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আমির আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাঈদুর রহমান, শাহজাহান তালুকদার ছেলে গোড়াই ইউনিয়ন (পশ্চিম) ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শাহারুল ইসলাম পারভেজ, সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান (ফজলু) স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে দুইটি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছেন। প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের প্রধান স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি একাব্বর হোসেন এর পিএস উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শামিম আল মামুন এর লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। স্থানীয়দের মধ্যে যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের অধিকাংশই পিএস শামিম এর লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত ও নানা ধরনের হয়রানীমূলক মামলার শিকার হয়েছেন।
স্থানীয়রা আরো জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও চর থেকে মাটি কাটার কারণে গ্রামরক্ষা বাঁধ ও সরকারি রাস্তা ইতিমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিও ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করে নদীতীর ভেঙে প্রায় তিন শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীর দক্ষিণ পাশে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় অনেকের জমিই ইতোপূর্বে বংশাই নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর বুকে চর জেগে উঠায় তাদের জমির চরে ও চরের সরকারী খাস ভূমিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি একাব্বর হোসেন এর পিএস উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শামিম আল মামুন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গত তিন মাস যাবত জবরদস্তি বেকু দিয়ে বালু-মাটি কেটে ড্রামট্রাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। বাধা দিতে গেলে তাদের বাহামভুক্ত লোকদিয়ে নাজেহাল করা হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হবে এবং জমির ফসল ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও তারা জানান।
বাংলা ড্রেজার ও বেকু দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক ড্রামট্রাক বালু ও মাটি বিক্রি করছে। দিনরাত ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয় গ্রামীণ সড়ক বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরো এলাকায় ধুলো-বালির আস্তর পড়ে গেছে। এছাড়া চর থেকে মাটির ট্রাক প্রধান সড়কের নিয়ে আসার জন্য চরের প্বার্শবর্তী কৃষি জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে কৃষি জমিতে কোন প্রকার ফসল ফলানোও সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, নদী খননের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। বংশাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। তাছাড়া এসব বিষয় স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন তদারকি করে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারি নির্দেশনার বাইরে কিছু করে না।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদনান জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এখন জানলাম। প্রাথমিক তদন্তের পর ওই বংশাই নদীতে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।
বিবার্তা/তোফাজ্জল/সুমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]