শিরোনাম
মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০১৮, ২০:১৮
মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ
ভুক্তভোগীর নানা
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

১২ বছরের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমেই আপসের চেষ্টা করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।


কিন্তু সালিশে উল্টো ওই ছাত্রীর নানাকেই ২৫ বার কান ধরে উঠবস করার রায় দেন গ্রাম্য মাতব্বরেরা। এই রায় না মানায় তাকে ও তার স্বজনদের পিটিয়ে যখম করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের লোকজন। এতে আব্দুল জব্বার, মুক্তার হোসেন, আব্দুর রহিম, শহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হন।


এদের মধ্যে আব্দুল জব্বারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।



আহত মুক্তার, আব্দুর রহিম ও শহিদুল জানান, তাদের কাছে থাকা গরু ব্যবসার ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের লোকেরা।


গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মোল্লাবাজার উত্তরপাড়া গ্রামে রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে।


এ ঘটনায় আহত আব্দুল জব্বারের ভাই আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।


ভুক্তভোগী পরিবার ও থানার নথি সূত্রে জানা গেছে, নানীর বাড়ি থেকে মামুদপুর মাদরাসায় কারিয়ানা পড়তো ওই ছাত্রী। সেখানকার শিক্ষক সালাউদ্দিন (৩২) পড়ানোর ছলে প্রায়ই ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো। সর্বশেষ প্রায় ১৫ দিন আগেও ওই ছাত্রীর সাথে একই ঘটনা ঘটায় সে। ওই মেয়ে বিষয়টি তার পরিবারের কাছে জানায়।


এঘটনায় ছাত্রীর নানী বাদী হয়ে মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে ওই শিক্ষকের সাথে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষককে চপেটাঘাত করেন নানী।


এঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির কাছে বিচার দাবি করেন ওই শিক্ষক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মাদরাসা পরিচালনা কমিটির পক্ষে গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল কুদ্দুস, রুবেল, রতন, মাজেম আলী, ডালু ও আফছার গ্রাম্য সালিশ ডাকেন।


সালিশে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়টি এরিয়ে যান তারা। উপরন্ত শিক্ষককে চপেটাঘাত করার অপরাধে আশকান মোল্লাকে ২৫ বার কান ধরে উঠবস করার রায় দেয় তারা।


ভুক্তভোগী আশকান মোল্লা অভিযোগ করেন, তার নাতনিকে যৌন হয়রানি করায় তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষককে চপেটাঘাত করেন। এঘটনায় সালিশ যৌন হয়রানীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপরন্ত ২৫ বার কান ধরে উঠবসের রায় দেয়া হয়। এরপর থেকে ওই শিক্ষক মাদরাসায় আসেনি।


রবিবার রাতে ওই রায় বাস্তবায়নের জন্য আবারো সালিশ ডাকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তারা রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মাতব্বরের লোকেরা তাকে এবং তার স্বজনদের পিটিয়ে যখম করে।


মাদরাসা শিক্ষক সালাউদ্দিন মাদরাসায় না থাকায় এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রতন জানান, ওই শিক্ষকের বাড়ি সিংড়া উপজেলায়। প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষক সালাউদ্দিন ওই মাদরাসায় চাকরি করছেন।


শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ওই ছাত্রীর নানী তাকে চপেটাঘাত করেছেন বলে দাবি তার। আর এ কারণেই গ্রাম্য সালিশে মাতব্বরগণ স্ত্রীর অপরাধে স্বামী আশকান মোল্লাকে ওই সাজা দিয়েছে বলে সাফাই গায় ওই সাধারণ সম্পাদক।


তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, রায় তো তারা মানেনই নাই বরং আমাদের এলাকার একটি মেয়েকে মারধর করেছে তারা।


এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, খবর পেয়ে রবিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/নাজমুল/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com