বিয়ের আগে সন্তানের মা হওয়া এক কিশোরীর দুঃস্বপ্নের দিন যেন কিছুতেই কাটছে না। পরিবার ও সমাজের শত বাধা উপেক্ষা করেই সে অনাহুত সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। পিতৃ পরিচয়হীন তার সেই ছেলে-সন্তানের বয়স এখন প্রায় তিন বছর।
ছেলের ভভিষ্যতের জন্য জীবন সংগ্রামে নেমেছে এই কিশোরী মা। সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে হতাশায় দিন কাটছে তার। ছেলের পিতার স্বীকৃতি পাবে কি না এর উত্তর জানা নেই। তবে আইনিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর সে।
কিশোরী ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ের। তখন সে নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতো। নানার বাড়ি বাঘারপাড়া উপজেলার আগড়া (দরিজাফরপুর) গ্রামে। এ গ্রামেই ব্র্যাক পরিচালিত স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো এই কিশোরী। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এ সময় নানাবাড়ির প্রতিবেশী যুবক এখলাসের লাম্পট্যের শিকার হয় মেয়েটি। ঘটনা যখন জানাজানি হয় কিশোরী তখন অন্তঃসত্ত্বা।
এখলাস জোহর আলী মোল্যার ছেলে। ঘটনাটি সে সময় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য বসা হয়।
কিশোরীর পিতা জানান, সালিশ বৈঠকে এখলাস তার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়। কিন্তু বাদ সাধে এখলাসের বোন ডলি ও ভাই এরশাদ। তারা শর্ত জুড়ে দেয়- গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করলেই তারা বিয়েতে রাজি হবে।
এ শর্তে কিশোরী ও তার পরিবার রাজি হয়নি। যে কারণে বৈঠক ভেস্তে যায়। এক পর্যায়ে বাঘারপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়। মামলা নম্বর ৯। তারিখ ১৩/০৭/১২। মামলায় আসামি করা হয় এখলাস, তার ভাই এরশাদ আলী ও বোন ডলি খাতুনকে।
মামলাটি বর্তমানে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে বিচার কার্য চলছে। মামলার বাদী হন কিশোরীর পিতা। মামলার পর আসামি পক্ষ থেকে তাকে অনেকবার জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকির ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে তিনবার। মামলা হওয়ার পর থেকে এখলাস পলাতক। অপর দুই আসামি জামিনে আছেন।
এদিকে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কিশোরী মা হয়। জন্ম নেয় এক ছেলে সন্তান। আজ তার বয়স প্রায় তিন বছর। ওই কিশোরী মা বলে এখলাস আমার সাথে প্রতারণা করেছে। তার ফূর্তির ফসল আমি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলায় তার শাস্তি হবে কি হবে না তা আদালত নির্ধারণ করবে। তার শাস্তি হলেও বা কী। আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হবে কী দিয়ে? যে মামলা হয়েছে, তাতে আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের কী হবে?
ওই কিশোরী মায়ের আকুতি- আমি চাই আমাকে এক টাকার কাবিনে বিয়ে করে পরদিন তালাক দিয়ে দিক। আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দিক। আমার এ দাবি পূরণ হলে আমার সন্তানকে কোনোদিনও সেখানে পাঠাবো না। তবে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য আইনিযুদ্ধ চালিয়ে যাবো। ছেলে মানুষ করার জন্য ঝিয়ের কাজ করছি। প্রয়োজনে আরো কষ্ট করব।
মামলার আইনজীবী নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ইদ্রীস আলী জানিয়েছেন, মামলার বিচারকার্যে সাক্ষীর পর্ব প্রায় শেষের দিকে। বৃহস্পতিবার (১৭/১১/১৬) এ মামলার চিকিৎসকের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে রায় হতে পারে। তিনি আশা করেন সব আসামির শাস্তি হবে।
বিবার্তা/তুহিন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]