শিরোনাম
মৌলভীবাজারে হাতুড়ে ডাক্তারদের চিকিৎসাবাণিজ্য
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫৬
মৌলভীবাজারে হাতুড়ে ডাক্তারদের চিকিৎসাবাণিজ্য
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

মৌলভীবাজারে হাতুড়ে ডাক্তারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সারা জেলায় তিন শতাধিক হাতুড়ে ডাক্তার ছড়িয়ে আছে। এসব তথাকথিত ডাক্তার রোগীকে দেখেই কোনো পরীক্ষা ছাড়া বলে দিতে পারেন রোগের নাম। ফুটপাতে বা একটি ফার্মেসিতে বসে কোনো ডাক্তারী যন্ত্রপাতি ছাড়াই এই অদ্ভুত নিয়মে রোগী দেখছে নামধারী এসব ডাক্তার। তারা দিতে পারে সকল রোগের ওষুধ।


এসব কথিত ডাক্তার কার্ড ও প্যাডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি বসিয়েছে। কেউ লিখেছে ‘অভিজ্ঞ’, আবার কেউ লিখেছেন বিশেষজ্ঞ। সাথে সাথে লাগিয়েছে নানা ডিগ্রি। অথচ এদের কারো পেশাচর্চার অনুমোদন নেই। এরপরও তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা।


মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী এমবিবিএস/ডেন্টাল পাস করে বিএমডিসির অনুমতি নিয়ে নামের সামনে ডাক্তার লেখা যাবে। বিএমডিসির অনুমতি না নিয়ে এমবিবিএস/ডেন্টাল পাস করেও নামের সামনে ডাক্তার লেখার কোনো বিধান নেই। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার তিন শতাধিক হাতুড়ে ডাক্তার স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নামের সামনে ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’ লিখে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য। বিশেষ করে তাদের এই বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ।


মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলা ও বড় বড় বাজারে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া শতাধিক হাতুড়ে ডাক্তারের তালিকা ইতিমধ্যে এই প্রতিবেদককের হাতে পৌঁছেছে। এ তালিকা থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তাদের অনেকেরই লেখাপড়ার দৌড় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। আবার কেউ কেউ ২১ দিনের আরএমপি অথবা ৬ মাসের এলএমএএফ ট্রেনিং নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক হাতুড়ে ডাক্তার এ বাণিজ্য করে হয়েছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক।


একটি সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার শহরের সিলেট রোডের বড়কাপন এলাকায় পরিতুশ দাশ গুপ্ত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি দীর্ঘ দিন মাহিন ফার্মেসিতে চাকরি করেছেন। এক পর্যায়ে নকল ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট এনে নামের সামনে ডাক্তার শব্দ বসিয়ে চিকিৎসা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। একই রোডের হোসেন কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সালাউদ্দিন ২১ দিনের আরএমপি প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। মানিক লাল দাসও ২১ দিনের ট্রেনিং নিয়ে নামের সামনে ডাক্তার লিখে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এলএমএএফ প্রশিক্ষণ নিয়ে নামের সামনে ডাক্তার লিখে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছেন সেন্ট্রাল রোডের সীমন্ত চন্দ্র, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার মির্জা মাহবুব আলম চৌধুরী, জুগিডর এলাকার ছয়ফুল ইসলাম ও দেবব্রত মিলু এবং আরএমপি ট্রেনিং নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারে পুতুল, সাহেদ আলী ও এস কে গোস্বামী সহ অনেকেই।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সচেতন নাগরিক জানান, বেরীরচর এলাকার আবুল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ডাক্তারের সহযোগী ছিলেন। অবসরে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নামের সামনে ডাক্তার লিখে দীর্ঘ দিন ধরে হাতুড়ে ডাক্তারি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু দিন আগে প্রশাসনের ভয়ে নামের সামনে থেকে ডাক্তার শব্দটি মুছে ফেলেন। একই এলাকায় শফিকুল ইসলাম শান্ত নাশা ও পাইলসের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে জেলাব্যাপী প্রতারণা করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। রোগীকে আকৃষ্ট করতে শহরের অলিতে গলিতে লাগিয়েছেন নানা রঙের পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার ও সাইন বোর্ড।


এভাবে হাতুড়ে ডাক্তারদের প্রতারণার শিকার হয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মৌলভীবাজারের অনেক রোগী। ভুল চিকিৎসায় জীবন দিতে হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষকে। ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।


এবিষয়ে পরিতুশ দাশ গুপ্তের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোর্টে আছি, পরে আপনার সাথে কথা হবে।


এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/আরিফ/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com