শিরোনাম
নির্বাচন নিয়ে আনসার বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৩১
নির্বাচন নিয়ে আনসার বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠভাবে আয়োজন করতে আনসার ভিডিপি ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৮তম জাতীয় সম্মেলনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সম্মেলন উপলক্ষে গাজীপুরের শফিপুরে অবস্থিত আনসার ভিডিপি একাডেমিতে সোমবার সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। এ সময় তিনি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন।


শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। তাই আনসার ও ভিডিপির প্রত্যেক সদস্যকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।


আনসার সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন আরো সমৃদ্ধশালী হোক। জনগণ যেন তাদের সাংবিধানিক অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারে। সেই বিষয়টায় যথাযথভাবে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।


জননিরাপত্তা বিধানে আনসার ও ভিডিপিকে সরকারের এক ‘নির্ভরযোগ্য বাহিনী’ হিসাবে গড়ে তোলার কথাও বলেন সরকার প্রধান।


দুটি মহিলা ব্যাটেলিয়নসহ আনসারের ৪০টি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে এখন। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় রয়েছে ১৫টি ব্যাটেলিয়ন।


শেখ হাসিনা আনসার সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখবেন, মানুষের নিরাপত্তা, বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং শান্তির পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র শপথ এবং দায়িত্ব। জননিরাপত্তা বিধানের যে পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের উপর অর্পিত আছে তা সঠিকভাবে পালন করবেন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাভূত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।


তিনি এই বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনারা সব সময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে জাতীয় সংকটকালে এবং জরুরি মুহূর্তে আপনাদের কর্মতৎপরতায় এ বাহিনী সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিণত করেছে। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা, মহাসড়কে নাশকতা রোধ এবং মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ রুখতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সকল শ্রেণিপেশার নাগরিকদের দিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।


তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের তাদের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কি করে তা ভালভাবে খোঁজ খবর রাখার আহ্বান জানান।


অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে বীরত্ব ও সাহসিকাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি ভিডিপি পদক, বাংলাদেশ আনসার সার্ভিস মেডেল, রাষ্ট্রপতি আনসার সার্ভিস মেডেল, বাংলাদেশ ভিডিপি সার্ভিস মেডেল এবং ভিডিপি সার্ভিস মেডেল বিতরণ করেন। এ সময় ১২৬ জনকে পদকে ভূষিত করা হয়।


এরআগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসারের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন এবং একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাইফউদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।


মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনিতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে আনসার ও ভিডিপির বিশেষ দরবারেও অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।


বর্তমান সরকার সবসময় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে তৎপর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান হতে শুরু করে আপনাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিসিএস কর্মকর্তাদের পদের মানোন্নয়ন সবই আমাদের সরকার করেছে।


তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট-কোম্পানি কমান্ডার, বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার, কোয়ার্টার মাস্টার ও অধঃস্থন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন ১৩শ’ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪শ’ টাকা ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডারদের যথাযখ ভাতা প্রদানের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আপনাদের সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ৩২ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি সম্পন্ন হবে।


সরকার প্রধান বলেন, আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রবর্তন করেছে। এই পদক প্রদান যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে লক্ষে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।


প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা এবং ১৫ আগস্ট নিহত তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চারনেতা, ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা বোনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।


তিনি আনসার বাহিনীর বীর সৈনিকের ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের কথাও স্মরণ করেন।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয়। তাদের ৪০ হাজার থ্রিনটথ্রি রাইফেলই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি।


পরে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপির পরিবেশনায় মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com