মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার খাস মহল গ্রামের নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের ছয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। অথচ এখনো উদ্ধার হয়নি অপহৃত মেয়ে। এলাকার প্রভাবশালীদের চাপে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না মেয়েটির অভিভাবকরা।
১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার উত্তরভাগ ইউনিয়নের খাস মহল গ্রামের মরম আলীর বাড়ি থেকে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ফয়ছল মিয়া ও তার সঙ্গীরা।
মরম আলীর স্ত্রী বুলু বেগম বলেন , উত্তরভাগ ইউনিয়নের লালাপুর গ্রামের গেন্দু মিয়ার ছেলে ফয়ছল মিয়া (১৭) প্রায় সময় মোবাইল ফোনে তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। এবং মাঝে মধ্যে বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে জোর করে ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়ত। আমার পরিবারে দিনের বেলা কোনো পুরুষ থাকতো না। আমার এক ছেলে সে কাজের জন্য বাইরে চলে যায় । আমি আর মেয়ে ঘরে একা থাকতাম। এই একা থাকার সুযোগ নেয় ফয়ছল। প্রতিনিয়ত আমার ঘরে এসে পড়ত সে।
ঘটনার দিন আমি মেয়েকে বাড়িতে রেখে অন্য বাড়িতে ব্যাংকের কাজে যাই। সেই সুযোগে ফয়ছল আমার বাড়িতে আসে। আমি বাড়িতে এসে দেখি ফয়ছল আমার ঘরে শুয়ে আছে। আমি তাকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলি। জবাবে সে আমাকে হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আমি মেয়েকে বকলে সে আবার ফিরে আসে। আমাকে ধমকায়। সে বলে আমাকে শিক্ষা দেবে। আমার মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। আমি ঘর থেকে বের হয়ে একটি গাছের নিচে চলে যাই। কিছুক্ষণ পরে ফয়ছল তার সঙ্গী নিয়ে এসে আমার মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। আমার মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য ফয়ছলের বাড়িতে যাই। গিয়ে তার মায়ের সাথে কথা হলে সে আমাকে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে গালাগালি করে। পরের দিন রবিবার জুয়েল নামের একটি ছেলের কাছ থেকে কল আসে। আমাক বলে মেয়েও ছেলে তাদের জিম্মায় আছে। জুয়েলের সাথে ছেলে মেয়ের কথা হলে, মেয়ে বিয়েতে রাজি হচ্ছে কিন্তু ছেলে রাজি হচ্ছে না। এ কথা শুনে মেয়ের মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরবর্তীতে আমি নিরুপায় হয়ে ওয়ার্ড মেম্বার রকিব মিয়াকে ও ফয়ছলের ওয়ার্ড মেম্বার ঝুনু মিয়াকে বিষয়টি অবগতি করি। এমন কি মহিলা মেম্বার রত্ন বেগমকেও বিষয়টি অবগত করি। তারা আমার মেয়েকে উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও আমার মেয়ে উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মহিলা মেম্বার রত্না বেগম বলছেন, তোর মেয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছে। তুই ফালতু এসে অন্যের ছেলেকে ফাঁসাতে চাচ্ছিস কেন? এই মহিলা মেম্বার রত্ন বেগম সব কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন কি তারা আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে বাঁধা দিচ্ছেন। রহস্যজনক কারণে এ বিষয় নিয়ে টাল বাহানা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বুলু বেগমের ওয়ার্ড মেম্বার রকিব মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, ছেলে মেয়ে দুটাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাই গ্রাম্য সালিসের মধ্যমে কিছু করার নেই। আইনি বাঁধা আছে। মেয়ের মার ইচ্ছা ছেলে মেয়েকে খুঁজে বের করে বিয়ে দিয়ে দেয়া। কিন্তু সেটা আমাদের দিয়ে সম্ভব্য নয়। মেয়ের মাকে কেন আইনের আশ্রয় নিতে দিচ্ছেন না এমন প্রশ্ন করলে মেম্বার কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেন নি।
মহিলা মেম্বার রত্না বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছেলে মেয়ের খোঁজ পেলে বিয়ে করিয়ে দেবো। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে বাল্য বিবাহের আওতায় পরে কি না জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, ছেলে মেয়ে রাজি থাকলে যে কোনো বয়সে বিয়ে হয়। বাল্য বিবাহে আইনে অপরাধ বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। বলেন, বিয়ের ব্যাপারে কিসের আইন। ছেলে মেয়ে রাজি থাকলে আইন কি করতে পারে। এটা বাংলাদেশ আইন খাতাপত্রে সীমাবদ্ধ।
এ বিষয়ে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গরিব ও অসহায় পরিবারের মেয়ে অপহরণের বিষয় নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা শুরু করেছেন নানা টাল বাহানা। মেয়ের খোঁজ মা কোনো দিন পাবে কি না এ বিষয়ে অনিশ্চিত।
বিবার্তা/আরিফ/সুমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]