সুস্বাদু ফল মাল্টা। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলটি পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদন হলেও এবার মাল্টা চাষ করে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার কৃষক এসএম আব্দুল্লাহ। উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী এখন পরিচিত মাল্টা গ্রাম হিসেবে।
কাঁঠালতলী গ্রামের কৃষক এস এম আব্দুল্লাহ তার পঞ্চনীল বাগানে ১০ বিঘা জমিতে ১০ বছর আগে ৫০টি মাল্টার চারা রোপন করেছিলেন। এ বছরে মাল্টা বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় মুহূর্তেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজ পাতায় পরিবেষ্টিত গুচ্ছ আকৃতির গাছে ধরেছে সবুজ মাল্টা। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টাগুলোর কোনোটিতে হলুদাভ ভাব এসেছে। মিষ্টি স্বাদে রসালো মাল্টা ফল প্রতিটি ডালে ফলেছে থোকায় থোকায়।
মাল্টা ছাড়াও এ বাগানের প্রতিটি ফলের সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশে। ফলগুলোকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখাচ্ছে। মাল্টা বাদেও এ বাগানে রয়েছে মোসাম্মি, চায়না থ্রি, বিচিহীন চায়না সিক্স লিচু, আম, কামরাঙ্গা, জলপাই, নারিকেল, কমলা, ছফেদা, অ্যাবোকাডো, ড্রাগন, ব্রুনাই কিং ফলের গাছ। এছাড়াও রয়েছে ঘৃতকুমারী, শতমুল, আমলকী, হাজারদানী, গুলিয়ারী, কালো তুলসীসহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধী গাছ। রয়েছে নানান জাতের বনজ গাছও।
আব্দুল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, ১০ বছর আগে পঞ্চনীল বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে তিনি বাংলাদেশে নতুন উদ্ভাবিত বারী মাল্টা-১ চাষ শুরু ৫০টি মাল্টার চারা রোপণ করেন। একবছরের মধ্যে ওই গাছগুলোতে ফল ধরে। তাই দেখে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন তিনি।
তিনি জানান, মৌসুমে প্রতিটি মাল্টা গাছে প্রায় দুই মণ করে মাল্টা ধরে। তার বাগানের সুনাম রয়েছে এলাকায়। অন্যান্য মাল্টার চেয়ে তার বাগানের মাল্টা খেতে সুস্বাদু। তাই স্থানীয় বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। এখন তিনি প্রতি মণ মাল্টা বিক্রি করছেন সাড়ে ৬ হাজার টাকায়।
তিনি আরো বলেন, মাল্টা চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এ অঞ্চলে মাল্টায় তেমন কোনো রোগ-বালাই নেই। এছাড়া মাল্টা চাষাবাদের খরচও অনেক কম। গত বছর তিনি বিভিন্ন জাতের সাতশ’ মাল্টার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে ১৫ একর জমিতে মাল্টা চাষের প্রজেক্টে তিনি হাতে নিয়েছেন।
আব্দুল্লাহর দাবি, তিনি বাগানে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। এর পরিবর্তে বাগানে জৈব সার এবং তার নিজস্ব উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে পোকা-মাকড় নিধন করেন। এখানকার মাটিতে উপরে বালু এবং নিচে পাথর রয়েছে তাই এখানকার মাটি মালটা চাষের উপযোগী বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, মিষ্টি কমলার উন্নত এ জাতের নাম বারি মাল্টা-১। ২০০৬ সালে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরাই এ জাতটি উদ্ভাবন করেছিলেন। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এ ফলটি এই অঞ্চলে খুবই সম্ভাবনাময়।
রোগ-বালাই ও ঝরে পড়া কম এবং উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের কাছেও বাণিজ্যিক চাহিদা বেড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এর চাষাবাদও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বিবার্তাকে জানান, ডোমার উপজেলার মাটি অনেক উর্বর ও মাল্টা চাষের উপযোগী। তাই আমরা কৃষি বিভাগ প্রথমে আব্দুল্লাহকে পরামর্শ দেই মাল্টা চাষ করার জন্য।
তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করায় ওই এলাকার মাল্টা অনেক সুস্বাদু ও বড় বড় আকারের হয়। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ডোমারে মাল্টা চাষে অনেক এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বিবার্তা/সমুন/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]