শিরোনাম
ঝালকাঠিতে শীতের কৃষিতে নায়কের ভূমিকায় নারীরা
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৮
ঝালকাঠিতে শীতের কৃষিতে নায়কের ভূমিকায় নারীরা
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার শীতকালীন শাকসবজি চাষ করে জীবিকা চালায়। এসব পরিবারের নারীরাই মূলত এ মৌসুমের প্রধান কৃষক। আর বাড়ির পুরুষরা সার-কীটনাশক দিয়ে ফসল গোছানো ও বাজারে বিক্রি করেন।


নারীরা ক্ষেতে পানি দেয়া, চারা বোনা, আগাছা পরিষ্কার, ফসল তোলাসহ সার্বিক কাজে ব্যস্ত থাকেন সকাল-সন্ধ্যা। তার সঙ্গে আবার সংসারের রান্না ও ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে হয় তাদের।


স্থানীয় ভাষায়, শীতের এই লতাকৃষির সময়ে গ্রামগুলোর নারীদের গাধার খাটুনি খাটতে হয়। আর তার বিনিময় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, আলু, লাউ, সিমলা-বরবটি, শালগমসহ নানা প্রকার শাকসবজি ফলে মৌসুমজুড়ে।


জেলা সদরের নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর, পোনাবালিয়া, বাসন্ডা ও কীর্তিপাশা ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩৬টি গ্রামে কান্দি বা সজ্জন পদ্ধতির শাকসবজি চাষাবাদ জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও বরিশালে রপ্তানি করা হয়। গ্রাম ঘুরে ঘুরে পাইকারা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বাজারে। আবার অল্প পরিমাণে হলে বাড়ির পুরুষরা তা স্থানীয় হাটগুলোতে বিক্রি করতে নিয়ে যান।


শীতের এই সময়টা কৃষক পরিবারে বেশ সচ্ছলতাও থাকে। তবে গত নভেম্বর মাসে পরপর দু’বার বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবু সেই দুর্যোগ কাটিয়ে একটু দেরিতেই ঝালকাঠির গ্রামে গ্রামে নারীর স্নেহ ভালোবাসার পরশে বেড়ে উঠছে শীতের লতাকৃষি। জমিতে সবজির পাশাপাশি আখ, আমড়া, পেঁপে ও পেয়ারা চাষ করে বছরের বাকি সময়টা চলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা।


শতদশকাঠি গ্রামের কৃষক সুখরঞ্জন বড়ালের স্ত্রী কানন বালা বড়াল বলেন, আমাদের ধানা জমি (ধানের জমি) নাই। শ্রাবণ-ভাদ্রে পেয়ারা-আমড়া আর শীতকালে লতাকৃষিতেই সংসার চলে। বৃষ্টি না হলে শীতের আয় দিয়ে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় চলে যায় আমাদের। সংসারের সুখের জন্য ঘরে বাইরে আমরা (নারীরা) কাজ করি।


ভীমরুলি গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ সবিতা রানী হালদারের সাথে দেখা হয় শেষ বিকেলে। তখন শালগম চাষের পরিচর্যা আর সাথে কাঁচা মরিচের চারা লাগাচ্ছিলেন তিনি। সবিতা বলেন, এক সময় গ্রামগুলোতে নারীরা কোলাতে (ক্ষেতে) এতো কাজ করতো না। তখন পেয়ারা, নারকেল, সুপারি আর সামান্য খোরাকির ধান (নিজেদের খাওয়ার জন্য) হতো। তবে ওই সময় প্রায় ঘরেই অভাব ছিল। কিন্তু এখন গ্রামগুলোর বউরা অনেকেই কোলায় কাজ করে। প্রায় ১২ মাস গ্রামগুলোতে সব ধরনের শাকসবজির চাষ হয়। ধান চাষ একেবারেই উঠে গেছে। গ্রামগুলোতে এখন চরম অভাবী পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না।’


ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, কৃষিপ্রধান গ্রামগুলোতে প্রণোদনা ও পরামর্শসহ নানাভাবে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে আসছে। তবে কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মজবুদ করেছে গ্রামের অর্থনীতির অবস্থা।


ঝালকাঠির ৩৬টি গ্রামে ঘরের মা-বোন ও বউ-ঝি মিলে প্রায় ৪ হাজার নারী এ মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছেন লতাকৃষির কাজে। আর বিনিময়ে সংসারে সচ্ছলতাও থাকে কয়েক মাস। আসলে হাতে এ সময় পয়সা থাকায় নানা পার্বণের নামে গ্রামবাসীরা মেতে থাকেন নানা উৎসব আয়োজনে। প্রায় শতবছর ধরে শুরু হওয়া এ চাষাবাদ পদ্ধতি বর্তমানে আরো আধুনিক হয়েছে।


এক সময় এই গ্রামগুলোতে ধান চাষ হতো। কিন্তু এখন জমিগুলো বেশিরভাগই নালা কেটে সজ্জন পদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে। তাই ধানের চাষ করা হয় না বললেই চলে। পেয়ারা, আমড়ার সাথে প্রায় ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল চাষ হয়। শীতকালের লতাকৃষির ওপর অনেকটা নির্ভর এখানকার কৃষিজীবীরা। আর ঝালকাঠির এ শীতের কৃষি বিপ্লবের গল্পে নারীরা এখানে নায়িকা নয়, নায়কের ভূমিকায়।


বিবার্তা/আমিনুল/শান্ত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com