শিরোনাম
আজ টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৪২
আজ টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত ও বিজয় দিবস উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।


শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সোমবার সকালে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক।


উদ্বোধন শেষে টাঙ্গাইল পৌরসভার আয়োজনে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সমবেত হয়।


র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-৫ আসনের এমপি আলহাজ মোঃ ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।


পরে পৌর উদ্যানের মুক্তমঞ্চে দিবসটি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।


১৯৭১ সালের এ দিনে বাংলার দামাল সন্তানরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। জয় বাংলা স্লোগানে মুখোরিত হয় জেলা। মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ। যুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পার হয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল।


১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই দেশ শত্রু মুক্ত করতে টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।


২৭ মার্চ বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় টাঙ্গাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ওইদিন রাতেই সার্কিট হাউজ আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অতর্কিত এ আক্রমণে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় ও ১৫০ জন আত্মসমর্পণ করে। প্রথম আক্রমণে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মে। এরপর থেকেই গ্রামে গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হতে থাকে।


পাক বাহিনী ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইল প্রবেশকালে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়চড়া নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে আক্রমণ করে। সেদিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। এরপর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালায় ওই গ্রামে। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১০৭ জন গণহত্যার শিকার হয়।


পাকবাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে আসে। তারা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠিত হতে থাকে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সাথে একের পর এক যুদ্ধ। চারদিক থেকে আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।


১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে পৌলিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় ২ হাজার সেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারা ছুটতে থাকে ঢাকার দিকে। সেই রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এমপি টাঙ্গাইল থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।


১১ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকেন এবং সারা শহর নিজেদের দখলে নিয়ে হানাদারদের ধরতে থাকেন। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লসিত মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে টাঙ্গাইল শহর।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com