এবার গরু নয়, সরাসরি মাংস আসছে ভারত থেকে। তবে এ মাংস দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসয়নিকদ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সেগুলো মানুষের ক্যান্সার, অ্যাথ্রাক্স ও কিডনি ড্যামেজের মত প্রাণঘাতী ব্যাধিসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এর মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
গত এক মাস ধরে যশোরের বাজারে গরুর মাংসের দাম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। হঠাৎ করেই কেজি প্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকা দাম কমে যাওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম কমে যাওয়ায় এ সময়ে গরুর মাংসের চাহিদাও বেড়েছে কয়েক গুণ।
যশোরের কাঠেরপুল এলাকার মাংস ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, মাস দু'য়েক আগেও কেজি প্রতি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৮০-৫০০ টাকা। ওই সময় মাত্র একটি গরুর মাংস বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। তবে প্রায় এক মাস ধরে তাদের বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। কেননা বর্তমানে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৩৫০-৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এতেই চাহিদা বেড়েছে গরুর মাংসের।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক দোকানি জানান, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় অন্তত ২৫ জন গোপনে তাদের কাছে কম মূল্যের গরুর মাংস সরবরাহ করে আসছেন।
মোটরসাইকেলে করে মাংস সরবরাহকারী যশোরের শার্শার বাগআঁচড়া এলাকার মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে এ মাংস কিনছেন। যেহেতু যশোরে মাংসের দাম বেশী তাই তিনি প্রতিদিন মাংস বিক্রির জন্য এখানে আসেন। একই কথা জানালেন অপর মাংস সরবরাহকারী শার্শার ঘিবা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, জীবিত গরু আনতে খরচ বেশী পড়ে। তাই ওপার থেকেই গরু জবাই করে বাংলাদেশে আনাহচ্ছে। এতে খরচ অনেক কম হয়, আবার লাভও বেশি।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন ৪৯ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, কয়েক দিন আগে বিষয়টি তাদের নজরে এলে প্রতিটি পোস্টকেই সর্বোচ্চ সতর্ক করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চোরাই পথে ভারত থেকে আসা মাংসের অনেক চালানও আটক করেছে বিজিবি সদস্যরা। তবে কৌশল বদলেছে চোরাকারবারিরা।
ভারত থেকে মাংস আসার বিষয়টি স্বীকার করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও। দপ্তরটির যশোরের উপ-পরিচালক ভবতোষ কান্তি জানান, ইতোমধ্যেই বিষয়টি তদারকির জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। দু'য়েকদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি'র সাথে যোগাযোগ করা হবে।
মাংস মানসম্মত নিয়ে আলাপকালে যশোর সদর হাসাপাতালের চিকিৎসক কল্লোল কুমার সাহা জানিয়েছেন, জবাইয়ের প্রক্রিয়া না জেনে কোনো মাংসই খাওয়া উচিত নয়। তাছাড়া মাংস বেশি সময় ভাল রাখার জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল (রাসায়নিকদ্রব্য) ব্যবহার করা হচ্ছে যা মানবদেহে ক্যান্সার, অ্যাথ্রাক্স ও কিডনি ড্যামেজের মত প্রাণঘাতী ব্যাধিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে জবাইকৃত পশুটি যদি অসুস্থ কিম্বা রোগগ্রস্থ হয়, সেই জীবাণু দ্বারাও মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে তারা।
বিবার্তা/তুহিন/শাহনেওয়াজ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]