শিরোনাম
সিডর তাণ্ডবের ১০ বছর
দখিনা হাওয়া ফেরে রোজ, তারা ফেরে না!
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৯
দখিনা হাওয়া ফেরে রোজ, তারা ফেরে না!
উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)
প্রিন্ট অ-অ+

দখিনের মানুষ আজও ভোলেনি সেই ভয়াবহ ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবের কথা। অনেকেই এখনও স্বামী, সন্তান, বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে সিডর কেড়ে নিয়েছিলো। তাতেই পরিবারে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। এ জনপদে প্রাণ হারানো মানুষের স্মৃতি কিংবা কবরস্থান পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়।


আকাশে মেঘ দেখলেই সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মানুষের বেড়ে চলে ছোটাছুটি। সিডর আঘাত হানার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তবাঁধের যথাযথ সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মান না হওয়ায় সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন ‘সিডর’ লণ্ডভণ্ড করে দেয় বিস্তীর্ণ জনপদ। ওই সময় ক্ষতিগ্রস্তহয় এসব এলাকার বেড়িবাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা, কৃষকের ক্ষেত ও মৎস্য সম্পদ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডরে এ উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৭৮ জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জেলে। স্বজন হারাদের কাছে তাদের খোঁজখবর নিতে গেলে তারা বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা জীবনে এই দিনটির কথা ভুলতে পারবেন না। বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৪৪০ টি পরিবারকে পাকা ও আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন,সিডরের পরবর্তীতে যেসব বাঁধ মেরামত করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক। ইতোমধ্যে মহিপুর, লালুয়া, ও দেবপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জোয়ারের পানির তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে তা ঠেকাতে পারবে না এই বাঁধ। এছাড়া অমাবস্যা-পূর্ণিমায় বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখনো গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে থাকে।


এছাড়া সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদেরপুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ঘর ও আবাসন পল্লী নির্মাণ করে দিয়েছে। বর্তমানে ওইসব নির্মাণকৃত অধিকাংশ ঘরগুলোর বেহাল দশা। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় তাদের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।


নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সোনাতলা গ্রামের সোয়াইব পণ্ডিতের দুই মেয়ে লুৎফুল নেছা ও রিয়া মণি সিডরে নিহত হয়। তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম একই সাথে দুই মেয়ে হারিয়ে পাগল প্রায়। সে দিনের কথা তার কাছে জানতে চাইলে বার বার তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।


নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আবসানের আব্দুর রব জানান, এ আবাসনে ২৮০টি ঘর রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরই এখন বসবাসের অনুপযোগী। কোনো ঘরে চাল নেই, আবার কোনো ঘরে বেড়া নেই। চালে পলিথিন দিয়ে থাকতে হয়। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে ঘরে শুয়ে শুয়ে চাঁদ-তারা দেখি।


মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বিধ্বস্ত বাঁধ লাগোয়া বসবাসরত গৃহিণী আলেয়া বেগম বলেন, আবহাওয়ার সিগন্যাল দিলে আমাদের দুঃশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এই বুঝি পানি উঠে তলিয়ে গেলো।


লালুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, সিডরের পরে তার এলাকায় বেড়িবাঁধের সংস্কার হয়েছে নামে মাত্র। ফলে জোয়ারের লোনা পানি ঢুকে ফসল নষ্ট করছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান জানান, সিডর পরবর্তি সময় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ওইসব ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাস উপযোগী করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার বেরিবাঁধ সংস্কারের জন্য টেন্ডার সস্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময় বিধ্বস্ত বেঁরিবাধের কাজ শুরু হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।


পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ বলেন, উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ ঝুঁকির সমস্যাগুলোচিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানে কাজ চলছে।


বিবার্তা/কুমার/ইমদাদ/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com