শিরোনাম
কখনো হারেননি প্রতিবন্ধী ওহাব আলী
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:০৭
কখনো হারেননি প্রতিবন্ধী ওহাব আলী
সৌরভ কুমার ঘোষ, কুড়িগ্রাম
প্রিন্ট অ-অ+

দুটো পা নেই, তারপরও দিব্যি নিত্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখে তো বোঝারই জো নেই যে তিনি একজন প্রতিবন্ধী। নাম তার ওহাব আলী। জন্ম থেকে শারিরীক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধি হলেও জীবন যুদ্ধ হার মানাতে পারেনি তাকে। সুস্থ্য-সবল মানুষের মতো পদচারণা তার। বয়সের সাথে দেহের বৃদ্ধি হয়নি তেমন।


চলেন কিভাবে তিনি? এমন রহস্য মাখা উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় সরেজমিনে গিয়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চলতে শিখে গেছেন তিনি। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো নিজের তৈরি করা ৩ চাকার বেয়ারিং গাড়িতে চড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মযজ্ঞ। দু হাতে নিপুন ভাবে বাঁশ দিয়ে তৈরী করেন ডালি, কূলা, হরপা। তার তৈরিকৃত জিনিসপত্র বাড়ি থেকেই বিক্রি করেন। অবসর কাটে তার বিকেল বেলা সুবলপাড় বাজারে। সেখানে পান সুপারীর দোকান দেখাশুনা করেন। সামান্য কিছু চাষের জমি আছে। সুস্থ সবল মানুষের মতো চাষও করেন তিনি।


থেমে যাননি ওহাব আলী। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবন গড়েছেন। সাবলম্বী হয়েছেন। সংসার চালাচ্ছেন স্বচ্ছলভাবে। কারো কাছে হাত পাততে হয়নি তাকে। জীবন সংগ্রামে নিজের প্রতিবন্ধকতার সাথে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ওয়াব আলীর জীবন পথে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে সামাজিক কাজেও অংশ নেন নিয়মিত। গ্রামের সকল সমস্যা সমাধানে আর দশজনের মতো তিনিও একজন সদস্য। অংশগ্রহণ করেন বিচার-সালিশে। প্রতিবন্ধী না ভেবে স্বাভাবিক মানুষ ভাবেন নিজেকে। নিজের গ্রাম এবং আশেপাশের মানুষের কাছে বেশ সুস্থ ও সৎ মানুষ হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন।


ওহাব আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের সুবলপাড় ৩নং ওয়ার্ডের মৃত নইমুদ্দি ব্যাপারির পুত্র ওহাব আলী। জায়গা জমি বাড়িভিটে প্রায় ৭-৮ বিঘা।


একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম, দুলাল, একাব্বর বলেন, আসলে ওহাব আলীকে আমরা কখনো প্রতিবন্ধি ভাবিনি। ছোট বয়স থেকে তার কাজকর্ম দেখে আসছি তাকে সবল মানুষ হিসেবে দেখি আমরা।


পরিণত বয়সে বিয়ে করেছেন ওহাব আলী। ওহাব আলী জানান, বয়স ৪৫ পেরিয়েছে। এই অবস্থায় আগের মতো পরিশ্রম করতে পারিনা। এরপরেও স্ত্রী নুর বানু ও এক সন্তান নুর ইসলাম (১৬) নিয়ে সুখেই আছি। বয়সের কারণে চলা ফেরায় কষ্ট হলেও ছেলে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করে। তার এখন একটাই কষ্ট বহুদিন চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে গিয়েও একটি হুইল চেয়ার মেলেনি। তিনি বলেন, বয়স বাড়ছে, এ বয়সে একটি হুইল চেয়ার পেলে চলাচলের অনেক সহজ হতো।


ওহাব আলীর স্ত্রী নুর বানু জানান, আমার স্বামী ছোট কর্মঠ ও পরিশ্রমী ছিল। সে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করে আজ এতদূর এসেছে। জমি বলতে পৈতৃকভাবে পাওয়া বাড়িভিটে টুকুই। কিন্তু তার পরিশ্রমে আজ মোটামুটি সংসারে স্বচ্ছলতা বিরাজ করছে। আমি ভাগ্যবতী এমন পরিশ্রমী লোকের সংসারে এসে।


নুর ইসলাম বলেন, বাবার কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করি। এরপর আর পড়াশুনায় আগানো হয়নি। সে সবুল পাড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ত।


কেদার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জব্বার বলেন, ওহাব আলীর প্রতিবন্ধী ভাতা রয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তার নামে হুইল চেয়ারের আবেদন করা হয়েছে।


উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সালেকুল ইসলাম জানান, হুইল চেয়ারের চাহিদার তালিকা জেলায় দেয়া আছে। বরাদ্দ আসলে দেয়া হবে।


বিবার্তা/সৌরভ/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com