শিরোনাম
ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতেই হোটেলে তরুণ-তরুণী খুন
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৪৭
ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতেই হোটেলে তরুণ-তরুণী খুন
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতে রাজশাহীর হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালে দেড় বছর আগে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়। হোটেলকক্ষ থেকে ওই তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর কর্তৃপক্ষ এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও অবশেষে এই খুনের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।


পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মুঠোফোন ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে। তাদের একজন গত শুক্রবার রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এই তথ্য জানিয়েছেন।


আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া ওই আসামির নাম আহসান হাবিব ওরফে রনি (২০)। সে পাবনার ফরিদপুর থানার জন্তীহার গ্রামের এনামুল হকের ছেলে। আহসান হাবিব রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় সে রাজশাহীতে থাকতো। পিবিআই সদস্যরা তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন।


নিহত মিজানুর ও আহসান হাবিবের একটি ফোন কলের সূত্র ধরে পিবিআই আহসান হাবিবকে শনাক্ত করে।


তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর একটি ছাত্রাবাস থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহাত মাহমুদ, রাজশাহী কলেজের ছাত্র আল-আমিন ও উৎসকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।


গত বছর ২২ এপ্রিল হোটেল নাইসের একটি কক্ষ থেকে মৃত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া নাসরিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মিজানুরের লাশ ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো ছিল। আর সুমাইয়ার লাশ ছিল বিছানায়।


আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর হাকিম জাহিদুল ইসলাম আসামি আহসান হাবিবের জবানবান্দি রেকর্ড করেন। হাবিব স্বীকার করে, হোটেল কক্ষে মিজানুরকে প্রথমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এর পর তারা সবাই মিলে সমুাইয়াকে ধর্ষণ করে। পুলিশের মেয়ে বলে ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা তাকেও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।


জবানবন্দিতে হাবিব আরো বলে, রাহাত মাহমুদের সঙ্গে প্রথমে সুমাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে মিজানুরের সঙ্গে নতুন করে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ নিয়ে রাহাত তার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। রাহাতের সঙ্গে আহসান হাবিব রনীর পরিচয় ছিল। রাহাত নগরের বিনোদপুরের একটি ছাত্রাবাসে থাকতো।


সেখানে সে আহসান হাবিবকে ডেকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানায়। মিজানুরের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পকের কথা শুনে আহসান হাবিব বলে, মিজানুরকে সে চেনে। এরই মধ্যে মিজানুরের সঙ্গে দেখা করার জন্য সুমাইয়া রাজশাহীতে আসছিলেন। মিজানুর তাকে নাটোরের বনপাড়া থেকে এগিয়ে নিয়ে আসেন।


সে সময় মিজানুর আহসান হাবিবকে ফোন করে জানতে চান শহরের কোন হোটেলে উঠলে ভালো হয়। আহসান হাবিব তাকে হোটেল নাইসে ওঠার পরামর্শ দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ এপ্রিল রাত ৮ থেকে ১০টার মধ্যে হোটেল কক্ষে তারা মিজানুর ও সুমাইয়াকে হত্যা করে।


আদালতে আহসান হাবিব বলেছে, হোটেলের ওই কক্ষে ঢুকে তারা প্রথমে শুধু সুমাইয়াকে পায়। তারপর তারা মিজানুরকে ফোন করে ডাকার জন্য সুমাইয়াকে চাপ দেয়। বাধ্য হয়ে সুমাইকে মিজানুরকে ফোন করে ডাকেন। এরপর মিজানুরের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে সবাই মিলে ধর্ষণের পর সুমাইয়াকে হত্যা করা হয় বালিশ চাপা দিয়ে।


এ ঘটনার পরের দিন সুমাইয়ার বাবা আব্দুল করিম বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তরুণ-তরুণী দুজনকেই হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় হত্যার অভিযোগ করা হয়। মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।


এ হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন বোয়ালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম বাদশা। পাশাপাশি মামলাটির ছায়া তদন্ত করেছিল পিবিআই। তবে পুলিশ পরিদর্শক মামলাটি তদন্ত শেষে সুমাইয়াকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে মিজানুর নিজেই আত্মহত্যা করেছেন বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।


কিন্তু এ প্রতিবেদনে সুমাইয়ার বাবা আব্দুল করিম আপত্তি তোলেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন দেয়া হলেও পুলিশের এই কর্মকর্তার অভিযোগ, হোটেল কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেছেন। এরপর পিবিআই ফের মামলার তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে এলো। ফলে এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরার আওতাধীন অভিজাত ওই হোটেলটিতে ঢুকে খুনিরা কীভাবে খুন করে বেরিয়ে গেল!


জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম বলেন, সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। তবে চারজন গ্রেফতার এবং একজনের স্বীকারোক্তি মামলার তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


বিবার্তা/রিমন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com