শিরোনাম
লামায় তামাকের পরিবর্তে আখ চাষ, লাভবান চাষিরা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৪৫
লামায় তামাকের পরিবর্তে আখ চাষ, লাভবান চাষিরা
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় পরিবেশের ক্ষতিকর তামাকের বিকল্প হিসেবে এবার আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে আখ চাষ করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী তামাকের চেয়ে আখের বাম্পার ফলন ও আশানুরূপ দামও পেয়ে বেজায় খুশি চাষিরা।

 

জানা যায়, গত তিন যুগের বেশি সময় ধরে লামার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক চাষে লাভ বেশি হলেও শারীরিক ক্ষতি, পরিশ্রম এবং মূলধন বেশি লাগার কারণে অনেক কৃষকই সাম্প্রতিককালে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। একই সাথে তারা তামাকের বিকল্প ফসল চাষের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে সব কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ করতেন তাদের অনেকেই এখন আখসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন।

 

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ১১০ জন চাষি এবার বিএসআরআই–৪২ রং বিলাস, চায়না–২৮, অমৃত–৮৪১, সিও–২০৮ ও বিএমসি–৮৬–৫৫০ জাতের আখ চাষ করেছেন। আবার কোনো কোনো চাষি এ প্রকল্পের বাইরে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও আখ চাষ করেছেন।

 

শুধু তাই নয়, এ সকল চাষি আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে আলু, গাজর ও ফরাশসিম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ আরো কয়েকটি কৃষি ফসল চাষে লামা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক আখ চাষের সঙ্গে জড়িত। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগী এবং জলাবদ্ধতা না থাকায় চলতি মৌসুমে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টর আখ চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। আর প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত আখ ১০ থেকে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

লামা পৌরসভার শীলেরতুয়া গ্রামে আখ ক্ষেত পরিদর্শনে গেলে চাষি সুইচিংমং মারমা বলেন, ৪০ শতক জমিতে রং বিলাস-৪২ জাতের আখ চাষ করেছি। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আখ বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাব।

 

তিনি আরো বলেন, আগে এসব ভূমিতে তামাক চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ হাজার টাকাও লাভ করতে পারতাম না। সাথী ফসল হিসেবে আখের ফাঁকে গাজর, ফরাশসিম ও আলু চাষ করেছি।

 

ছাগলখাইয়া এলাকার কৃষানি হুরে জান্নাত খুকি জানান, তিনি দুই লাখ টাকা খরচ করে আখ চাষ করেছেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার আখ বিক্রি করবেন বলে তিনি আশা করছেন।

 

লামা চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা খুচরা আখ ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, শতপ্রতি আখ আড়াই হাজার টাকা হারে কিনে তিনি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। তার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক আখ চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন বলে জানান তিনি।

 

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্প লামা উপজেলায় দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারী বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা জানান, চলতি বছর তারা কয়েকজন কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে সাড়ে তিন হেক্টর জমিতে আখ চাষ করিয়েছেন। এর মধ্যে রংবিলাস– ৪২, অমৃত–৮৪১, চায়না–২৮, সিও–২০৮ ও বিএমসি–৮৬ ও ৫৫০ জাতের আখ চাষ হয়েছে। এসবের মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া ও চিনি বা গুড়জাত রয়েছে।

 

তামাকের বিকল্প চাষ হিসেবে এখানকার মাটিতে আখ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

লামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. নুরে আলম জানান, পার্বত্য এ ভূমিতে আখ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের রৌদ্রোজ্জ্বল উষ্ণ আবহাওয়ায় আর্দ্র মাটিতে আখের সবচেয়ে ভালো ফলন হয়। বেলে দোঁআশ থেকে শুরু করে এঁটেল পর্যন্ত সব মাটিতেই আখ চাষ করা সম্ভব হলেও পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল দোঁআশ মাটি আখ চাষের জন্য সর্বোত্তম। সহনীয় উষ্ণ তাপমাত্রা, প্রচুর রৌদ্র ও আলো–বাতাস এবং মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত আখ চাষের সহায়ক।

 

বিবার্তা/আরমান/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com