শিরোনাম
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:২৯
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নরসিংদীর মনোহরদীতে শিক্ষক নিয়োগের নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।


নরসিংদীর মনোহরদীর দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগের নামে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তোয়াক্কা না করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ছাড়াই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সভাপতি।


ইউএনও কার্যালয় ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, মনোহরদীর দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের নামে বিভিন্ন এলাকাবাসীর থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা অনেক ঘুরাঘুরি করেও টাকা না পেয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিউল্লাহর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।


জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিয়োগ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন এবং আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দিবেন এই মর্মে তিনশত টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম ও কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেনের (কনক) উপস্থিতিতে মুচলেকা দেন।


এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তার কার্যালয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা আক্তারের উপস্থিতিতে নেয়ার জন্য স্কুল কমিটিকে নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি ইউএনও’র নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ছাড়াই দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় এক ছাএলীগ নেতা অপু দাসকে সাথে নিয়ে টাকার বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।


ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গণিত অথবা বিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে বেলাবরের বিন্নাবাইদ গ্রামের আবুল কালাম কাছ থেকে ২ লাখ টাকা। মনোহরদীর কৃষ্ণপুর গ্রামের আহসান হাবীবের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এর কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মো. মানিক মিয়াকে স্কুলের নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ও নৈশপ্রহরী নিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী বেলাবোরের বিন্নাবাইদ গ্রামের আবুল কালাম বলেন, দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এর নিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


কৃষ্ণপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একজন শিক্ষক কি করে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে, তার খুটির জোর কোথায় বলে প্রশ্ন তুলে ধরেন।


একই গ্রামের আহসান হাবীব বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যদি প্রতারণা করে, সাধারণ মানুষ আর কাকে বিশ্বাস করবে?


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এত টাকা আমি কাদের কাছ থেকে নিয়েছি জানি না। সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ এর পরীক্ষা স্যারের (ইউএনও) এখানেই হবে বলে তিনি মোবাইনের লাইনটি কেটে দেন।


দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিবেদককে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে হওয়ার কথা বললেও ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে শুধু স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় ছাএলীগ নেতা অপু দাসকে সাথে নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদের লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা অপু দাস বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির ৫ জনই উপস্থিত ছিলেন। নিয়োগ কমিটিতে যারা যারা আছেন সবারই রেজুলেশনে সাক্ষর রয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ নিয়োগের নামে টাকা পয়সা নিয়েছেন কি না এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।


দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল কমিটির সভাপতি অপু দাস নিয়োগ কমিটিতে সবার উপস্থিত থাকার কথা বললেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সময় উপস্থিত ছিলেন না। এই নিয়োগে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছেন।


এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার বলেন, দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে আমি উপস্থিত ছিলাম না। এ ব্যাপারে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে আমি ইউএনও স্যার এর কাছে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



বিবার্তা/রাসেল/আমিরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com