শিরোনাম
নরসিংদীতে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি
দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা কারিগরদের
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৪২
দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা কারিগরদের
শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী
প্রিন্ট অ-অ+

নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। নদীর তীরে বন-জঙ্গলে কাশফুলের শোভা জানান দিচ্ছে শরৎ এসেছে শারদ আভা নিয়ে। আর কিছুদিন পরই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব।


প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা দেখে বোঝা যায়, সামনে আর বেশি সময় নেই। তাই নরসিংদীতে পুরোদমে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। দুর্গা দেবীকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে দিনরাত রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নরসিংদীর প্রতিমা শিল্পীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজ-সজ্জার ব্যাপক আয়োজন।


দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে প্রতিমা তৈরির কাজ। খড় ও মাটি দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে রং ও অঙ্গসজ্জার কাজ। নরসিংদীর ৬টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরির কারখানাগুলোতে যেন দম ফেলার সুযোগ নেই শিল্পীদের।


নরসিংদী শহরের সেবা সংঘের পাশে মৃন্ময়ী প্রতিমালয়ের মালিক খিতিশ পাল জানান, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন রং তুলির আঁচড়ে প্রতিটি প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার কাজ চলছে। অর্ডার অনুযায়ী সময় মতো প্রতিমা সরবরাহের জন্য দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে।


নরসিংদীর কারিগরদের তৈরি এসব প্রতিমা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিা সাথে সাথে এবার কারিগরদের মজুরি বেশি হওয়ায় লভ্যাংশ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন এখানকার প্রতিমা কারখানার মালিকপক্ষ।



অপরদিকে পলাশ উপজেলার কুড়াইতলীর কারখানার প্রতিমা কারিগর নিখিল পাল জানান, বাঁশ, কাঠ, খড় ও লোহাসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আগের মতো লাভের মুখ দেখা যাবে না। তবুও বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হচ্ছে।


আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর নরসিংদী জেলায় ৩২৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৯৭টি, রায়পুরা উপজেলায় ৬২টি, পলাশ উপজেলায় ৩৭টি, শিবপুর উপজেলায় ৬৯, মনোহরদী উপজেলায় ৪৬টি এবং বেলাব উপজেলায় ১৮টি পূজা মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হবে।


নরসিংদী শহরের উল্লেখযোগ্য পূজাগুলোর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সেবা সংঘ দুর্গামন্দির, বাগবিতান ক্লাব দুর্গামন্দির, শিববাগ দুর্গামন্দির, অগ্রণী সংঘ দুর্গামন্দির, বিজয়া সংসদ দুর্গামন্দির, যুবক সংঘ দুর্গামন্দির, মহামায়া দুর্গামন্দির, বৌয়াকুড় দুর্গাবাড়ী দুর্গামন্দির এবং মাধবদীর কাশিপুরের সার্বজনীন দুর্গামন্দির অন্যতম।


পূজা উপলক্ষে প্রতিমা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।


নরসিংদী জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী নরসিংদী জেলায় এই সার্বজনিন দুর্গাপূজায় সাধারণত কোনো ঘটনা ঘটে না। এই পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গ, পূজা কমিটি, হিন্দুবৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সভা করেছি এবং তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যেখানে প্রতিমা তৈরি হয়েছে সেখানে আমরা কাউন্সিলিং করেছি নিরাপত্তার ব্যবস্তা করেছি। আশা রাখছি হিন্দু ধর্মের যে উৎসব তা অনারম্বরভাবে পালিত হবে।


হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজায় আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে পুলিশ সুপার আমেনা বেগম জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগসহ জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, জেলা উপজেলার পূজা মণ্ডপের সভাপতি ও সেক্রেটারীদের নিয়ে আমরা মতবিনিময় সভা করেছি। আমরা তাদের কিছু নির্দেশনাও দিয়েছি। যেমন, মণ্ডপে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তা সমন্বয়কারী, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নাম্বার দৃশ্যমান জায়গায় টানানোর ব্যবস্থা করবো। আর বড় বড় মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নারী পুরুষদের জন্য আলাদা গেইট ও প্রতিটি মণ্ডপে আনসার এবং বিডিপি মোতায়েন হবে। তিন থেকে চারটি মণ্ডব একত্রে করে ভাগ করে দেয়া হবে যাতে, পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি ফোর্স তদারকি করা হবে।


এছাড়া যেখানে প্রতিমা নির্মাণ হচ্ছে সেখানে আমাদের পুলিশ টহল দিচ্ছে। আর প্রতিমা বিসর্জনের দিন যেনো সুষ্ঠু ভাবে বিসর্জন হয় সেই ব্যবস্তা করবো।


নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা জানান, আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য হিন্দু মুসলিম সকলেই কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রতিটি মণ্ডপ এলাকায় কোনো প্রকার সমস্যা আছে কি না সেসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।


তিনি জানান, পাঁচদিনব্যাপী হিন্দুদের দুর্গাপূজায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিমদের এক মিলনমেলায় পরিনত হবে গ্রাম এবং শহরের মণ্ডপগুলো। আর নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং নরসিংদীর মেয়র সকলকে নিয়ে একাধিক মিটিং করেছে। আমরা আশ্বস্ত গতবারের মতো এবারো পূজা শেষে নরসিংদীর স্বাধীনতা চত্তরে বাধ্যযন্ত্রসহকারে একত্রিত হবে এবং মেয়রের নির্মিত বিসর্জন ঘাটে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মাধ্যমে মা দুর্গাকে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপনি হবে।


বিবার্তা/রাসেল/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com