শিরোনাম
‘দৈনিক সংবাদ’ -এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:১৩
‘দৈনিক সংবাদ’ -এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা থেকে বাতিল এবং তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন নিয়ে ‘দৈনিক সংবাদ’ -এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।


মঙ্গলবার লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ‘দৈনিক সংবাদ’ -এর সম্পাদক ও প্রতিবেদকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করেছেন।


জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘লালমনিরহাটে-একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু ও বিতর্কিত তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি মো. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদকে ‘বঙ্গবন্ধুর খুনির দোসর’ উল্লেখ করার অভিযোগে, তিনি বাদী হয়ে ‘দৈনিক সংবাদ’ -এর সম্পাদক আলতামাশ কবির, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান এবং জেলা প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক গোকুল রায়ের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ এনে সোমবার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান মণ্ডল মামলাটি শুনানি অন্তে আগামী ২৮/০১/২০১৮ তারিখে দিন ধার্য করেন।


এ ব্যাপারে সাংবাদিক গোকুল রায় বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে আমার নিজস্ব কোন বক্তব্য বাদীর বিরুদ্ধে না থাকলেও মামলার আর্জিতে মূল প্রসঙ্গ কৌশলে এড়িয়ে সরাসরি প্রতিবেদককে টার্গেট করে আক্রমনাত্মক, আপত্তিকর এবং ‘নীতিভ্রষ্ট সাংবাদিক’ উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক এবং দেশের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণীর প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ‘দৈনিক সংবাদ’কে একাধিকবার ‘সংবাদ’ নামক একটি পত্রিকা উল্লেখ করে পত্রিকাটির মর্যদার প্রতি আঘাত করা হয়েছে। অথচ একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি হয়েও মহান স্বাধীনতার ধারক-বাহক এই পত্রিকাটিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আর্জিতে উল্লেখ করেন মেজবাহ উদ্দিন।


অপরদিকে, তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে জেলায় সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং তার হাত ধরে জেলায় সাংবাদিকতা এগিয়ে চলছে, একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক হিসেবে তিনি সুনামের সাথে চার দশকের বেশী সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। সাংবাদিক বলেন, ‘সেই আমাকেও ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অথচ মামলার আর্জিতে উল্লেখিত খবরটির মূল বিষয়, একজন সরকারি কলেজের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তালেব একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও আরো অনেকের সাথে তাকেও যাচাই বাছাইয়ের নামে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়া হয়। তিনি ক্ষোভে ও অভিমানে এই যাচাই বাছাই কমিটির সামনে হাজির হননি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ওই ক্ষোভে-দুঃখে গত ঈদ-উল-আযহার দিন হার্ট এ্যাটাকে মারা গেলে পরদিন তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। শুধু তাই নয়, ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার অন্যতম একজন সংগঠক মো. শামসুল হককেও কমিটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করলে নব্বইউর্ধ্ব উক্ত সংগঠক কমিটির সামনে হাজির না হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বালকদের সামনে ৪৬ বছর পর হাজির হয়ে নিজের দেশাত্ববোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রমাণ দেয়ার চেয়ে তার আগে মৃত্যু শ্রেয় ছিল বলে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে চরম ক্ষোভ এবং দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। যা দৈনিক সংবাদে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও কাজী মোসলেম উদ্দিন নামের অপর এক প্রথম সারির সংগঠক মারা যাওয়ার পর যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছিল তাঁর নামেও এই বাছাই কমিটির নামে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। অপর একজন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং মুক্তিযোদ্ধা (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব) শ্রী কৃষ্ণ গোপাল রায়কেও নোটিশ পাঠিয়ে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেজবাহ উদ্দিন সরকারি নির্দেশনা, প্রজ্ঞাপনের বিধিবিধানের দোহাই দিয়ে বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সাফাই গাইলেও তাঁর কার্যক্রমের জন্য সহকর্মীদের কাছে তিনি নিজেকে এবং বাছাই কমিটিকে বিতর্কিত করেছেন। এ কারণেই তাঁর সহযোদ্ধারাই তাঁর বিরুদ্ধে এবং যাচাই বাছাই কার্যক্রম বাতিলের দাবিতে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধরা নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। সংবাদ প্রতিবেদকের এখানে কোন দায় নেই।


যাচাই বাছাইয়ের নামে তালিকাভূক্ত দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে বাতিল, বাছাই কমিটির অনেকের আত্মীয়-স্বজনদেরকে এমনকি কুখ্যত রাজাকার পরিবারের সদস্যকেও মুক্তযোদ্ধা তৈরি শুধু নয়, বাছাই কমিটির সভাপতি মো. মেজবাহ উদ্দিনের অতীতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কার্যকলাপ এবং পঁচাত্তরের স্বঘোষিত খুনি গংদের লালমনিরহাটে এনে সে সময়ের ফ্রীডম পার্টিকে সংগঠিত করার নানা অপতৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের নামে বিপুল অংকের অর্থ বাণিজ্য, নিজ মহল্লার সরকারি রাস্তা ও জমি দখলসহ নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বহু অভিযোগ এনে তাঁকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের থানাপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে ফ্রীডম পার্টির অফিস খুলে প্রচার প্রচারণা চালানো এবং জনসমাবেশ আয়োজন করে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা চালায়, যা সে সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর প্রতিবেশীরা এবং তারই সহযোদ্ধারা একাধিকবার বর্ণনা করেন এবং তাঁর বিচার দাবী করে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সাংবাদিক সম্মেলন, দফায় দফায় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।


এ সংক্রান্ত সকল সংবাদ দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং মিডিয়াগুলোতে ব্যপক ভাবে প্রচার হয়। এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য নেই।


গোকুল রায় অভিযোগ করে আরো বলেন, মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয় যে, “স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই বাদীকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তি উল্লেখ করা হয়”। অথচ, প্রকৃত অর্থে ওই প্রতিবদনে প্রতিবেদক নিজস্ব কোন বক্তব্যে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করেননি বা তিনি এ আখ্যাও তিনি নিজে দেননি। বরং আন্দোলনকারী তাঁর সহযোদ্ধারা ও মেজবাহ উদ্দিনেরই নিজস্ব মহল্লবাসী তাঁকে বঙ্গবন্ধুর খুনির দোসর এবং আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং তাঁরাই যাচাই বাছই কমিটির ভূমিকা বিতর্কিত বলে এর যাবতীয় কার্যক্রম বাতিলসহ বঙ্গবন্ধুর খুনির দোসর হিসেবে তাঁর গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। আর্জিতে তিনি স্বাক্ষ্য প্রমানের কথা উল্লেখ করে মূল অভিযোগ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনির দোসর হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগটি অস্বীকার করতে পারেনি শুধু ‘স্বাক্ষ্য প্রমাণ’ না থাকার কথা উল্লেখ করে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেন।


বিবার্তা/জিন্না/আমিরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com