শিরোনাম
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘুষ বাণিজ্যের আখড়া
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:২৫
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘুষ বাণিজ্যের আখড়া
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে যেখানে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ সংযোগকে ঘিরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে চলছে নৈরাজ্য। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে ছেয়ে গেছে পুরো অফিস। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে বিদ্যুৎসংযোগ নিতে আসা এলাকার শত শত গ্রাহক। নতুন মিটার সংযোগ পেতে ফ্রি জমা দিতে হয় ৬৫০ টাকা কিন্তু চালালচক্র নিচ্ছে মিটার প্রতি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ।


এছাড়া কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী কতিপয় প্রতিষ্ঠানের মিটার টেম্পারিং করেও হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি শত শত গ্রাহক। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ না দিলে সংযোগ আবেদনের ফাইল চাপা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আর ঘুষ হলেই সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে মিলছে নতুন সংযোগ। ঘুষ ছাড়া মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে মেলে না কোনো ধরনের সেবা। কাজের অর্ডার হওয়ার পরেও ঠিকাদারদেরও দিতে হয় টাকা।


আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ- দু’ক্ষেত্রেই দিতে হয় মোটা অংকের ঘুষ। ঘুষের এ টাকা সমিতি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ বাণিজ্যের এ অঙ্ক বড় করার জন্য সমিতি দুর্নীতিবাজ লোকজন বিদ্যুতের লোড নিয়েও চালাচ্ছে মিথ্যাচার।


মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুতের অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একশ্রেণির দলাল চক্র। দ্রুততম সময়ে মিটার ও সংযোগ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে নিরীহ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ অবস্থায় প্রতিদিন ভুক্তভোগীর সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।


অভিযোগ আছে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয় সংযোগের জন্য বিদ্যুতের লোড অনুমোদনে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লোড অনুমোদনে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয়। আর আবাসিক লোড অনুমোদনে ঘুষ দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর গ্রাহক আঙিনায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতেও ঘুষ দিতে হয়। সংযোগ বাণিজ্য ছাড়া বিদ্যুৎ চুরি, মিটার রিডিংয়ে অনিয়ম, গ্রাহক হয়রানিসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে এ সমিতিতে। অনেক ক্ষেত্রে সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আড়ালেও ঘটছে অনিয়ম ও দুর্নীতি।


এরপরও গ্রাহকদের অভিযোগ যথাসময় থাকছে না বিদ্যুৎ। বিশেষ করে দুপুর, সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় খুবই সমস্যার মুখোমুখি হন। অভিযোগে জানা গেছে, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকার পরও দুর্নীতিবাজ চক্র টাকা না দিলে কাউকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না। আর টাকা দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সিন্ডিকেট স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহক আর শিল্প মালিকদের ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। লোড বাড়াতে গেলেও পকেট ভরে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে করা হচ্ছে হয়রানি। কেটে দেয়া হচ্ছে সংযোগ।


সরেজমিন মৌলভীবাজার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিসের) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি আর লুটপাটের ফলে সরকারের সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে একদিকে যেমন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না, তেমনি শত শত কারখানাও ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে শিল্পমালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের সুদের চক্রে পড়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। সেই সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীও বেকার হয়ে পড়ছে। অথচ দুর্নীতিবাজ, অসৎ সিন্ডিকেট গড়ে তোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) পবিসের চিহ্নিত কর্মকর্তারা সব মহলকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।


মৌলভীবাজার শহরের বাসিন্দা আক্তার হোসেন নামে এক গ্রাহক বিবার্তাকে জানান, তার নিজের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করেন। দীর্ঘদিন তিনি সংযোগ না পেয়ে মিটার আজিম নামে এক দালালের শরণাপন্ন হন। পরে তাকে মিটারপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে দিলে ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ পেয়ে যান।


তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাধারণভাবে আবেদন করলে বছরের পর বছর পার হয়ে যায় , কিন্তু সংযোগ মেলে না। এসব দালাল পল্লী বিদ্যুতের অফিসের কাছে নিজেদের কার্যালয় খুলে বসেছে। কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়লে সমাধানের আশ্বাসে হাতিয়ে নেয় টাকা। আর এ টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কিছু কর্মকর্তা।


মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বিবার্তাকে জানান, মৌলভীবাজার সদরে সর্বমোট ৪৯ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হয়েছে। চাওয়ামাত্র গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে দালালমুক্ত করা হয়েছে। আর ৪ হাজার সংযোগ দেয়া হলেও শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ পূর্ণ হবে। মৌলভীবাজারে কোনো বিদ্যুৎ সংকট নেই। আর বর্তমানে বন্যার কারণে লাইন নতুন লাইন স্থাপন করা যাচ্ছে না। পানি নামলে আবারও নতুন সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।


বিবার্তা/আরিফ/প্লাবন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com