শিরোনাম
মৌলভীবাজারে শিক্ষকদের বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৪৫
মৌলভীবাজারে শিক্ষকদের বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ও শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মৌলভীবাজারে চলছে কোচিং বাণিজ্য। রমরমা এই বাণিজ্য শুধু মৌলভীবাজার জেলা শহর নয় ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামঞ্চলের প্রায় প্রতিটি স্কুল ও কলেজে।


অভিভাবকরা বলছেন, নানা ধরনের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে তারা তাদের সন্তানদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করছেন। শিক্ষকদের কাছে তারা অসহায় বলেও জানান তারা।


মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।


জানা যায়, কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকদের সহায়তা করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও। এর বিনিময়ে প্রতি মাসে তারা মোটা অংকের মাসোহারা গ্রহণ করছেন। অনেক স্কুলে কোচিং করানোর জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্লাসরুমও ভাড়া দেয়া হচ্ছে।


স্কুল, কলেজের অভ্যন্তরীণ ইনকোর্স ও ভাইবা পরীক্ষায় এমনকি স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে নম্বর কম দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করানো হয়।


এসব শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে অথবা অন্যের নামে কোচিং সেন্টার খুলে নির্বিঘ্নে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।


আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মাঞ্জু মিয়া সরকার বিবার্তাকে কোচিং পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে কোনো ক্লাস আমার বাদ পড়ে না। সকালে এবং ক্লাস শেষে কয়েকটি ব্যাচ পড়াই।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি, গণিত, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২জন এবং সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান ও বাংলা বিভাগের ৩জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত।


সরেজমিনে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মো. মশিউর রহমানের বাসায় গেলে দেখা যায়, তিনি তার ঘরে ২০/২৫ জনের একটি ব্যাচ পড়াচ্ছেন।


সূত্র জানায়, তিনি মাসে ১০০/১৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ব্যাচে জনপ্রতি ৬’শ টাকা করে পড়ান। ওই বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান শাহীও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবু হানিফ সকাল ৮টা থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী এবং দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যার পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যাচে অনার্স ও মাষ্টার্সের কয়েকশ শিক্ষার্থীকে কোচিং করান। এই কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক দিপালকও তার বাসায় শিক্ষার্থীদের পড়ান বলে জানা গেছে।


সূত্র জানায়, কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জিয়াউর রহমান সর্বদা কোচিং নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সপ্তাহে তিনদিন মাসে ৮০০ টাকা দিয়ে তার কোচিংয়ে পড়তে হয়। এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্সের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও পড়ান তিনি। তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা যায়, ফেইসবুকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের সময় ও অনুষাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে অবগত করেন। ওই বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মহিউদ্দিনও উনার বাসায় ব্যাচ করে নিয়মিত কোচিং পড়ান বলে সূত্র জানায়।


এদিকে মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী, হিসাবজ্ঞিান বিভাগের রেজাউল করিম জনি ও বাংলা বিভাগের আব্দুল হালিম কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।


কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত শিক্ষক সুব্রত পাল, ইংরেজি শিক্ষক মুহিবুল হাসান, বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুর রউফ, মনিরুজ্জামান, নোমান আহমদ ও আবু সায়েম। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজ কুমার, জুতি লাল সূত্রধর, সুজিত সিংহ, আশরাফ মুহিত, সুরেন্দ্র কুমার দে, গণিত শিক্ষক মোস্তাক আহমদ ও আব্দুল আহাদ। আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক শাহাব উদ্দিন, ইংরেজি শিক্ষক মাঞ্জু মিয়া সরকার ও বশির উদ্দিন। হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মাহবুবুর রহমান স্বপ্ন, সরওয়ার আহমদ ও মিনহাজ আহমদ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।


মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জিয়াউর রহমান কোচিং য়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, অভিবাবকরা আমার কাছে ছেলেমেয়ে দিয়ে শান্তিতে থাকে। অন্যান্য শিক্ষকরা যেভাবে কসাইর মতো টাকা আদায় করে। আমি তা করি না। বরং অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা টাকায় পড়াই।


শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট কলামিষ্ট মো. আবু তাহের বিবার্তাকে বলেন, এভাবে সরকারি নীতিমালা না মেনে শিক্ষকরা যদি কোচিং চালিয়ে যান। তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এ জাতি এগুতে পারবে না। কিছু কিছু শিক্ষকরা সর্বদা টাকা উপার্জন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এজন্য আইন প্রয়োগ করে কোচিং বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।


বিবার্তা/আরিফ/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com