শিরোনাম
নরসিংদীতে পুলিশের বিরুদ্ধে লুটের অভিযোগ
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৩১
নরসিংদীতে পুলিশের বিরুদ্ধে লুটের অভিযোগ
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নরসিংদীর রায়পুরায় পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা ও গরু লুটের অভিযোগ উঠেছে। গরু ব্যবসায়ীদের থেকে ৭০ লাখ টাকাসহ ২৫ টি গরু লুট ছাড়াও ব্যবসায়ীদেরকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে।


রায়পুরা থানা পুলিশ মেঘনা নদীতে গরু ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে টাকাসহ গরু লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত চাওয়ায় গরু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাদের পরিবারের লোকজন। অপরদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রায় ৯ লাখ টাকা ও ২৫টি গরু জব্দের কথা স্বীকার করেছেন রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দোলোয়ার হোসেন।


স্থানীয়রা জানায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নের হরিপুর, দরিপুর, শুটকিকান্দী ও গোপিনাথপুর গ্রামের দুই শতাধিক ব্যক্তি গরু ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ওই ৪ গ্রামের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন ব্যবসায়ী গরু নিয়ে নৌকা যোগে পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বাইশ মৌজা গরুর হাটে যায়। হাট শেষে অবিক্রিত ২৫টি গরু ও গরু বিক্রির নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মেঘনা নদীর মাঝখানে আসা মাত্রই রায়পুরা থানার এসআই শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি পুলিশের দল তিনটি স্পিড বোট নিয়ে তাদের গতিরোধ করে। এসময় অস্ত্রের মুখে ব্যবায়ীদের জিম্মি করে তাদের তল্লাশি চালিয়ে গরু বিক্রির প্রায় ৭০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। পরে দুই নৌকার সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে ৪৯ জনকে নাশকতা ও বিস্ফোরণ মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।


লুটকৃত৭০ লাখ টাকার মধ্যে আবেদ আলী বেপারীর ১০টি গরু বিক্রির ৫ লাখ টাকা, বাবুল বেপারীর ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ইসলাম উদ্দিনের ৭০ হাজার টাকা, কালু মিয়ার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ফেলু মিয়ার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, করিম মিয়ার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, জলিল মিয়ার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, কাশেম মিয়ার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, খলিল মিয়ার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, কাশেম মিয়ার ২ লাখ টাকা এবং শাজাহান মিয়ার ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাকিরা জেলে থাকায় পরিবারের লোকজন সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি।


রায়পুরা থানার পুলিশের দাবী, ৮০/৯০ জন লোক বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের আটক করে। ওই সময় তাদের কাছে থেকে ২১টি রডের টুকরা, ৩২টি ককটেল ও ৪৪টি টেঁটা জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।


গরু ব্যবাসায়ী মো. জাকারুল জানান, আমাদের দুইটি নৌকায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা ছিল। যা পুলিশ বেশী ডাকাতরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।


গরু ব্যাবসায়ী ইউসুফ জানান, এস আই শাখওয়াত তিনটি স্পিডবোট নিয়ে আমাদের ঘেরাও দেয়। পরে তারা নৌকায় উঠে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং টাকাগুলো তিনটি গামছা দিয়ে বেঁধে একটি স্পিড বোটে নিয়ে চলে যায়।


নৌকার মাঝি নিজাম ও বশির জানান, পুলিশের ভয়ে তিন বেপারীর প্রায় ৪ লাখ টাকা একটি ছেঁড়া কাথা দিয়ে নৌকার নিচে লুকিয়ে রাখি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি তাদের।


কালু বেপারীর স্ত্রী অরিফা বেগম জানান, সমিতি থেকে ঋণ তুলে তার স্বামী ব্যবসা করেন। পুলিশ তার স্বামী ও ছেলের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে গেছে পুলিশ। আবার তাদেরকে জেলেও পাঠিয়েছে।


আরেক গরু ব্যবসায়ী ভুট্রো জানান, পুলিশ এই গরু ব্যবসায়ীদের সাথে যে কাণ্ড করেছে তাতে পুলিশ আর ডাকাতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছেন না তিনি।


রায়পুরা থানা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া গরু ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন জানান, থানায় নেয়ার পর পুলিশ সদস্যদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে, মামলা দেয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়। পরে বাধ্য হয়ে মামলা থেকে বাঁচতে গরু বিক্রির ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।


এদিকে এক সাথে এতোগুলো ব্যাবসায়ীকে আটক করে নেয়ার পর তাদের স্বজনরা থানায় ভীড় জমায়। পরে আটক কিশোর ও বয়বৃদ্ধসহ ১১ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রায়পুরা থানা পুলিশের এসআই মো. শাখাওয়াত হোসেনের সাথে কথা বলতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও বন্ধ পাওয়া যায়।


অন্যদিকে রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দোলোয়ার হোসেন জানান, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চালাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ৪৯ গরু ব্যবসায়ীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, ৭/৮ জন ডিবি এসোল্টভুক্ত, ১৬ জন টেঁটাযোদ্ধা।


টাকা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানান, তাদের কাছে থাকা ৯ লাখ ৬ হাজার ১৫০ টাকা পাওয়া গেছে। যা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে গেলে কেউ এত টাকা নিয়ে যায় কিনা জানতে চাইলে ওসি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।



বিবার্তা/রাসেল/আমিরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com