মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে আনা ত্রাণসামগ্রী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে জমা না দিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে সড়কে গাড়ি থামিয়ে তা বিতরণ করা হচ্ছে। এতে রাস্তায় যেমন যানজট হচ্ছে, তেমনি চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সড়কে ত্রাণ বিতরণকালে হাজার হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেলে গাড়িচাপা পড়ে বালুখালী পান বাজার এলাকায় দুই শিশু ও এক নারী নিহত হয়।
এদিকে, সড়কে যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণের কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে দীর্ঘ ৮৪ কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। এতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ দূরপল্লার যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় পথচারীদের দাবি, প্রশাসন অবিলম্বে কোনো পদক্ষেপ না নিলে উখিয়া-টেকনাফ এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, পথচারী ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
শুক্রবার উখিয়ার কুতুপালং নতুন বস্তি এলাকা টিভি রিলে কেন্দ্রের পাশে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে কিছু যুবক ট্রাকে করে কাপড় বিতরণ করছে। আর হাজার হাজার রোহিঙ্গা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করছে। এসময় কথা হয় মিয়ানমারের মংডু তমবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুশুক্কুরের (৪৫) সাথে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, দমনপীড়ন, গুলি করে নারী, পুরুষ, শিশু হত্যার কারণে জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে আসি। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে সাতদিন অবস্থানের পর গত ২ সেপ্টেম্বর পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি।
তিনি জানান, গত ১৯ দিনে মাত্র এক বেলা খাবার খেয়েছে তার পরিবার। বিতরণ করা ত্রাণ কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
কুতুপালং রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়া বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গা খুইল্যা মিয়া (৭৯) জানান, তার আশেপাশে যারা আছে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মালামাল পেয়ে থাকলেও তিনি এখন পর্যন্ত কিছুই পাননি।
বালুখালী এলাকার আকবর আহমদ জানান, সড়কের উপর গাড়ি থামিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ত্রাণ বিতরণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ১০ বছরের দুই রোহিঙ্গা শিশু এবং শুক্রবার সকালে দুই সন্তানের এক জননী মারা গেছেন। তবে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এভাবে সড়কে যানজট সৃষ্টি করে ত্রাণ বিতরণ বন্ধের দাবি জানান তার মতো আরো অনেকে।
শাহপুরী গার্ডেনের ম্যানেজার ও বালুখালী কাস্টমস এলাকার ছৈয়দ আলম জানান, সড়কের উপর বেপরোয়া ত্রাণ বিতরণ ও মালামাল বিতরণের কারণে প্রতিদিনই কুতুপালং থেকে পালংখালী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ১০ মিনিটের সড়ক যোগাযোগ এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। সড়কে কোনো পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কথা থাকলেও প্রশাসনের দায়সারা মনোভাবের কারণে কেউই তাদের কন্ট্রোল রুমে ত্রাণ জমা দিচ্ছেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণের কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। সেই সাথে অনেকে ত্রাণ বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে দেয়া ত্রাণগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য কুতুপালংয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
বিবার্তা/শফিক/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]