শিরোনাম
অসহায় সহিদুলের দিন কাটছে অনাহারে
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ২০:১৬
অসহায় সহিদুলের দিন কাটছে অনাহারে
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

বয়সের ভারে ন্যূব্জ সহিদুল হক বাবরু মিয়ার (৬৯) দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। তিনি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুরের কোনাগাঁও শ্রীপুরের বাসিন্দা।


দুইবছরের ধরে সহিদুল পড়ে আছেন রাস্থার পাশের একটি জীর্ণ একচালা ঘরে। সন্তানরা থেকেও যেন নেই। সবাই যার যার মত বাবাকে রেখে বসাবাস করছে অন্যত্র। যার ফলে অসহায় অবস্থায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে বৃদ্ধ সইিদুলের। অনাহারে জীবন যাপনের কারণে তার দেহটি কঙ্কালসার হয়ে উঠছে।


উপজেলার কোনাগাঁও শ্রীপুরের মৃত মৌলভী আব্দুল করিম এর ছেলে সহিদুল হক বাবরু মিয়া। তারও সুখের সংসার ছিল। রয়েছে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। তারা বসবাস করেন শ্রীমঙ্গলের আউটার সিগন্যালের পাশে পূর্ব বিরাহিমপুরে।


সরেজমিন দেখা যায়, রাস্থার পাশে চারফুট বাই পাঁচফুট একটি একচালা ঘরের মধ্যে থাকেন তিনি। অনেকদিন ঘরটিতে ছিলনা বেড়া। এখন বেড়া দেয়া হয়েছে, তাও আধভাঙা। তিনি মাটিতে শুয়ে বা বসে দিন কাটান। আছে একটি নোংরা চট, মাটি দিয়ে ভরা একটি থালা ও কয়েকটি ময়লা প্লাস্টিকের বোতল। তার গায়ে শুধু একটি ছেঁড়া শার্ট ছাড়া আর কিছুই নেই। উলঙ্গ অবস্থায় আছেন তিনি। মুখে অগোছালো দাঁড়ি। অনেকটা ময়লা নর্দমার মতো ঘরের অবস্থা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন ঘরের মধ্যেই। লোকজন রাস্থা দিয়ে যাবার সময় হাত পেতে ভিক্ষা খোঁজেন। কখনো কেউ দেয় আবার কখনো গালি দেয়। অনেক সময় শিশুরা পাগল মনে করে তাকে উত্ত্যক্তও করে।


তার সাথে কথা বললে জানা যায়, আগের তার জায়গা জমি সবই ছিল। সহায়-সম্বল সবই হারিয়ে ফেলেছেন। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরাও তার খোঁজ নেয় না। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে এখানে পড়ে থাকেন। অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করেছন।


সাহিদুল হক আরো জানালেন, তার বোন আছে। তিনিও তার স্বামীর বাড়িতে ভালো অবস্থায় আছেন। কিন্তু সবাই থেকেও তার কাছে সবাই মৃত। কারণ কেউ তাকে এ অবস্থা হতে মুক্তি দিতে ছুটে আসে না। পাগল মনে করে নিজের সন্তানরাই দূরে সরে গেছে। অপলক দৃষ্টিতে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানালেন, বাবরু মিয়ার ভাই ফজলুল হক ভাত দিতে এসে তার দুই গালে চড় মাড়েন এবং বলেন সে কেন মরে না! আবার কেউ কেউ বলেন, বাবরু মিয়া আগে জুয়া খেলে এবং খারাপ পথে চলে টাকা নষ্ট করেছেন, তাই আজ তার এ অবস্থা।



এ ব্যাপারে তার বড় ভাই ফজলুল হক বিবার্তাকে বলেন, আমি যখন ব্রাহ্মণবাজার নামক স্থানে পোস্ট মাস্টারের চাকরিতে ছিলাম তখন ভাইকে দোকান করে দিয়েছিলাম। সেটা সে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন ছোটভাইকে তিনি ভাত এনে খাওয়ান বলে দাবি করেন।


ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বিবার্তাকে জানান, তিনি একবার এলাকা থেকে চাঁদা তুলে বাবরু মিয়াকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও সে থাকতে চায় না। সে নাকি হাসপাতালের টিস্যু পেপার খেয়ে ফেলতো।


বিবার্তা/আরিফ/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com