শিরোনাম
রাতের আঁধারে সব হারালো ওরা
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৪১
রাতের আঁধারে সব হারালো ওরা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

গভীর রাত। ঘুমে আচ্ছন্ন বশির মিয়া (৪০) ও রেশমা বেগম (৩৫) দম্পতি। হঠাৎই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লো যাত্রীবাহী বাস। আর সকাল হলো না তাদের। তবে পাশের ঘরে থাকায় বেঁচে যায় তাদের দুই সন্তান। কিন্তু রাতের আঁধারে সব হারালো ওরা। বাস শুধু তাদের মা-বাবাকেই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র-সব। আর কিছুই রইলো না তাদের।
রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় বুধবার রাত পৌনে ২টার এই দুর্ঘটনায় দিপু (৩৫) ও চম্পা (৩০) নামে আরেক দম্পতি আহত হয়েছেন। বশিরদের বাড়ির পাশের বাড়িটিই তাদের। দিপু রেলওয়ের গেটম্যান হিসেবে চাকরি করেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক আরিফুল ইসলাম।
বুধবার সকালে নিহত বশিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বহু মানুষ তার বাড়িতে ঢুকে পড়া বাস দেখতে এসেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, বশিরের জন্মস্থান বরিশাল। প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি রাজশাহীতে বিয়ে করে সরকারি এ জমিতে বাড়ি করেন। এরপর থেকে তারা এখানেই বসবাস করতেন।
বশির ভ্যান চালাতেন এবং রেশমা গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এলাকায় তারা খুবই ভালো মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন। তাদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রেশমার বোন রোখসানা বেগম (৪০) জানান, বশিরের তিন ছেলে। ১৫ বছরের বড় ছেলে হৃদয় রঙ মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে। মেজ ছেলে আলিফ (৮) বাড়িতেই থাকে, আর ছোট ছেলে রাহাত (৬) কেবল স্কুলে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় হৃদয় বাড়িতে ছিল না। আর আলিফ ও রাহাত পাশের ঘরে ঘুমিয়েছিল। সেজন্য তারা অক্ষত রয়েছে। তবে ঘরবাড়ি, বাবা-মা হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব। অসহায় এসব শিশুদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
দুর্ঘটনার সময় আলিফদের নানি আমেনা বিবিও (৭০) পাশের একটি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মাঝ রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙার পর তিনি দেখেন, শরীরের ওপর টিনের ছাদ নেমে এসেছে। টিন সরিয়ে বেরিয়েও তিনি আঁচ করতে পারেননি কী ঘটেছে। তারপর যখন দেখেন, বাড়ির ভেতর যাত্রীবাহী বাস আর বহু মানুষের হুড়োহুড়ি- তখনই তিনি ঘটনাটি টের পান। এরপর মেয়ে-জামাইকে খোঁজা শুরু করেন। কিন্তু পাননি। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
কেয়া পরিবহনের ওই বাসটিতে চড়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাঘরাইল গ্রামের মামুন-অর-রশিদ (২৫)। তিনি বসেছিলেন চালকের পাশের আসনটিতেই।
মামুন জানান, নাচোল থেকে বাসটি রাত ১০টায় ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস ছাড়ে রাত ১২টায়। এই দুই ঘণ্টা পুষিয়ে নিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী আসার পর থেকে চালক বাসের গতি বাড়িয়ে দেয়। চালকের কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবও ছিল। সেজন্য বাসের যাত্রীরা তাকে কয়েকবার গতি কমিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেন। কিন্তু চালক কারো কথা কানে না তুলে বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
তিনি আরো জানান, বহরমপুর এলাকায় রেলক্রসিংয়ের বাঁক নিতে গিয়ে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। গাড়ির গতি এত বেশি ছিল, প্রায় এক ফুট উঁচু কংক্রিটের ফুটপাত পেরিয়ে বাসটি সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে বাসের সামনের দিকে থাকা ৬-৭ জন যাত্রী আহত হন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসিরা খানম জানান, রেলক্রসিংয়ের ওই বাঁকে মাঝে মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে রাতের ঘটনাটি ঘটেছে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে বাস চালানোর ফলে। সেজন্য তিনি ওই বাস চালকের শাস্তি দাবি করেন। পাশাপাশি নিহতদের তিন সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এ বিষয়ে নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, নিহত স্বামী-স্ত্রীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। দুর্ঘটনার পর বাসচালক পালিয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিকেও জব্দ করে থানায় নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বিবার্তা/রিমন/নিশি



সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com