শিরোনাম
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার এক হালি কারণ
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০১৭, ১৪:৩৪
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার এক হালি কারণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

সাম্প্রতিক সময়ে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যাগুলো মিডিয়ার কারণে লাইমলাইটে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে একমত যে, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত হলে চট্টগ্রাম সহজেই জলাবদ্ধতা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। তারা চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার এক হালি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এই কারণ চারটি হলো গত কয়েকদিনের জোয়ারে অতিরিক্ত পানির জন্য অমাবস্যা, ভারী বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল এবং কাপ্তাই লেকের পানি ছেড়ে দেয়া।


আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মতে, আজ মঙ্গলবারও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। সোমবার রাত নয়টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।


চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘অতি বৃষ্টির পানির সাথে ভরা জোয়ারের কারণে কর্ণফুলী নদীর পানি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ সীমার প্রায় তিন মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ জলও নগরের জলাবদ্ধতায় চাপ বাড়াচ্ছে। আবার পাহাড়ি অতি বৃষ্টির পানি কাপ্তাই্‌ হ্রদের জলসীমা অতিক্রম করাতে বাঁধ কর্তৃপক্ষ প্রতি সেকেন্ডে ৩৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়ছে। একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে আরো ২৬ হাজার কিউসেক জল প্রতি সেকেন্ডে কর্ণফুলীতে নামছে। তাছাড়া হালদাসহ শাখানদীগুলোর জলও কর্ণফুলী নদীতে এসে পড়ছে। সে জলও কর্ণফুলী নদীর জলসীমা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে এই চাপ পড়ছে নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যায়। এতে নগরের জলজটের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।


আবহাওয়াবিদরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের সময়ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জোয়ারের সময় এমনিতেই বিভিন্ন খাল দিয়ে নগরীতে পানি ঢোকে। ওইসময় ভারী বৃষ্টিপাত হলে পানির ধারণ ক্ষমতা আরও কমে যায় খাল-নালার। এতে সৃষ্টি হয় অনিয়ন্ত্রিত জলজটের। আবার প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অমাবস্যার কয়েকদিন জোয়ারের পানির প্রবাহ বাড়ে। এই বিষয়টি পূর্ণিমার সময়ও প্রযোজ্য।



অন্যদিকে গত ২৩ জুলাই থেকে কাপ্তাই লেকের পানি ছাড়া হচ্ছে। লেকের ১৬ ‘স্পিল’ দিয়ে ২ ফুট হারে বাড়তি পানি ছাড়া হচ্ছে। গত শনিবার সকাল আটটায় কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ছিল ৮৭ দশমিক ৫২ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। কিন্তু পানি ছিল ১০৫ দশমিক ৩৯ ফুট এমএসএল। ফলে বাধ্য হয়ে পানি ছাড়া হয়েছে লেকের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল এবং উজানের পানিও যোগ হচ্ছে লেকে। এতে কাপ্তাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লেকের পানি ছাড়া হয়। সোমবার বিকেলে কাপ্তাই লেকে পানি থাকার ছিল ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এম এস এল)। তবে লেকে এখন পানি ছিল ১০৫ দশমিক ৬৭ ফুট এমএসএল। তারপরও মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে লেক থেকে পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবদুর রহমান।


এদিকে ভারতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ৯ জুলাই গজলডোবা বাঁধের সব কটি গেট খুলে দিয়েছে দেশটি। এতে ভারত থেকে ধেয়ে আসছে বানের পানি। এতে তিস্তায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।


এদিকে ভুক্তভোগী চট্টগ্রামবাসীর অনেকে বলেন, দিনে পানি উঠার হার রাতের চেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ৬০ লাখ লোক বাস করেন নগরীতে। এদের ব্যবহার্য পানির একটা চাপ থাকে দিনের বেলায়। যা রাতের বেলায় কমে যায়। এছাড়া দিনে বিভিন্ন অফিস-আদালত খোলা থাকায় শহরের বাইরে থেকে আসা লোকজনও যে পানি ব্যবহার করেন তার চাপ পড়ে নালা-নর্দমায়। কিন্তু রাতে সেটি লক্ষ্য করা যায় না।


এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।


চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘রাত ৯টা (সোমবার) পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com