শিরোনাম
নির্বিচারে সাপ নিধনে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪৪
নির্বিচারে সাপ নিধনে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গত ১৮ দিনে মারা হয়েছে প্রায় ৪০০টি গোখরা সাপ। প্রতিনিয়ত সাপের আস্তানার সন্ধান মিলছে। কিন্তু এখানে সাপ ধরার মতো কোনো লোক নেই বন বিভাগের। ফলে সাপ ধরা নিয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহও নেই। এ অবস্থায় জেলাজুড়ে চলছে সাপ নিধনের মহোৎসব।

 

নির্বিচারে সাপ নিধনে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১৫ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ সাপের প্রধান খাবার। সাপ এগুলো না খেলে আমরা হয়তো টিকতে পারতাম না। ঝুঁকি মনে হলে বাসায় কার্বলিক এসিড রাখবেন। কিন্তু অযথা সাপ মেরে নতুন বিপদ ডেকে আনবেন না দয়া করে।’

 

কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর এমন আহ্বান তেমন কাজে আসেনি। এখনো নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে নিরীহ এই প্রাণীটিকে। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন-জঙ্গল ও কৃষি জমিতে ডিম পাড়ার জায়গা কমে যাওয়ায় মানুষের ঘরমুখী হচ্ছে সাপ। কিন্তু সেখানে এভাবে নির্বিচারে সাপ নিধনের ফলে একদিকে যেমন ফসলি জমিতে বেড়ে যাবে ইঁদুরের উৎপাত, তেমনি প্রাকৃতিক ভারসাম্য পড়বে হুমকিতে। আর সে জন্য দায়ী থাকবে জনগণের অসচেতনতা এবং বন বিভাগের অবহেলা।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, এভাবে পাওয়ামাত্রই সাপগুলো মেরে ফেলা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সাপ ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। একটি সাপ প্রায় তিন একর ফসলি জমির ইঁদুর নিধন করতে সক্ষম। তাই এসব সাপ ধরে উপযুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বন বিভাগকেই।

 

 

তবে বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নামে আগে রাজশাহীতে বন বিভাগের একটি শাখা ছিল। ওই শাখায় বন্য প্রাণী ধরতে অভিজ্ঞ পাঁচজন কর্মকর্তাও ছিলেন। বন বিভাগের পাঁচ বছরের একটি প্রকল্পে শাখাটি খোলা হয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে সে প্রকল্প শেষ হয়েছে।

 

প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ওই পাঁচ কর্মকর্তা রাজশাহী থেকে চলে গেছেন। এখন বন বিভাগে যেসব কর্মকর্তা আছেন, তারা পাখি, বানর বা এসবের মতো সাধারণ প্রাণী ধরতে পারেন। কিন্তু সাপের মতো বিষধর প্রাণী বাগে আনতে দক্ষ নন তারা। তবে এখানে সাপ ধরার কিছু জিনিসপত্র এবং খাচা রয়েছে। দক্ষ জনবলের অভাবেই উদ্ধার করা যাচ্ছে না কোনো সাপ।

 

বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক একেএম রুহুল আমিন বলেন, ‘এখন সাঁপুড়ের মতো সাপ ধরার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ সাপ ধরে আটকে রাখলে আমরা সেটি উদ্ধার করে নিয়ে আসতে পারি। এভাবে কয়েকটি সাপ উদ্ধার করে সুন্দরবন পাঠিয়েছি। কিন্তু ইদানিং বাসাবাড়িতে যেসব সাপ পাওয়া যাচ্ছে, খবর পেলেও আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব না।’

 

গত ৪ জুলাই রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া এলাকার এক বাড়িতে প্রথম সাপের আস্তানার সন্ধান মেলে। এরপর থেকে জেলার পবা, তানোর, দুর্গাপুর, বাগমারা, মোহনপুর, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলায় দফায় দফায় মেলে প্রায় ১৫টি সাপের আস্তানা। সর্বশেষ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারি গ্রামের একটি বাড়িতে ১৮টি গোখরা সাপ মারা হয়েছে।

 

 

শুক্রবার সকালে ও বৃহস্পতিবার ওই গ্রামের মোরশেদুল আলমের শোয়ার ঘর থেকে সাপগুলো বেরিয়ে আসে। এভাবে রাজশাহীতে বাড়ির শোয়ার ঘর, রান্না ঘর ও গোয়াল ঘরের ইঁদুরের গর্তের এসব সাপের আস্তানা থেকে বের করে মারা হয়েছে প্রায় চারশ’রও বেশি সাপের বাচ্চা। নষ্ট করা হয়েছে আড়াইশ’র মতো সাপের ডিমও।

 

এসব সাপ উদ্ধার করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, একের পর এক বাড়িতে সাপের আস্তানা পাওয়া গেলেও তারা একটিরও আগাম খবর পাননি। খবর পেয়েছেন সাপগুলো মারার পর। সাপের আস্তানার খবর পেলেও তারা সেসব সাপ উদ্ধার করতে পারবেন না। সাপ ধরতে হলে এখন তাদের সাঁপুড়ে ডাকতে হবে। আর রাজশাহীতে সাপ সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

 

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেটি মেরে ফেলা যাবে। এটি আইনেই আছে। রাজশাহীর বাসাবাড়িতে যেসব সাপ মারা হচ্ছে, সেগুলো আতঙ্কিত হয়েই মারা হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। তবে সাপ নিধন বন্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে তারা কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।

 

বিবার্তা/রিমন/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com