শিরোনাম
২ বছর ধরে শিকলে বাঁধা সাইফুল!
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০১৭, ১৭:০৮
২ বছর ধরে শিকলে বাঁধা সাইফুল!
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সাইফুল ইসলাম। বয়স ১০ বছর। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলামকে দুই বছর ধরে পায়ে শিকল পড়িয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। যাতে সাইফুল ইসলাম হারিয়ে না যায়। পায়ে শিকল থাকার কারণে দুই পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয় সাইফুলকে। এমনই এক অমানবিক দৃশ্য দেখা যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামে। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম ওই এলাকার আশরাফুল ইসলাম ও ছালেহা বেগম দম্পতির ছেলে।


মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলামের মা ছালেহা বেগম বলেন, জন্মের দুই বছর পর খেলতে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় সাইফুল। ওই সময় তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হলেও সুস্থ হয়ে উঠেনি সাইফুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সাইফুল ইসলামের চিকিৎসা। সাইফুল প্রায়ই বাড়ির বাইরে চলে যায়। কয়েকবার হারিয়েও গিয়েছিলো সাইফুল। তাই বাধ্য হয়ে তার দুই পায়ে শিকল বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া তাকে বাইরে বের করা হয় না।


সাইফুলের চাচা জিয়া ইসলাম বলেন, যতই অসুস্থ বা পাগল হোক, ছেলে তো আমাদের, তার প্রতি মায়া আছে। তাকে না দেখলে তার বাবা-মা ও আমাদের রাতে ঘুম আসে না। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম যাতে বেশি দূরে যেতে না পারে। বেশী দূর গেলে পরে হারিয়ে যায়, সেই ভয়ে তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যদি তাকে শিকল দিয়ে বাঁধা আমাদের অপরাধ হয়। তাহলে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতায় মায়া কেন দিয়েছে আল্লাহ, তা আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন। এর আগে সাইফুল ইসলাম একাধিকবার হারিয়ে গিয়েছিল। মাইকিং করে কয়েক দিন পর তার খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তার পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখা হয়েছে।



ওই এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, সাইফুল ইসলাম তার নিজের নাম ও বাবা-মায়ের নামসহ অনেক কিছুই বলতে পারে। শিশুটির সঠিক চিকিৎসা করানো হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বছর প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তার নাম তালিকায় পাঠানো হয়েছে। সাইফুলের বাবা আশরাফুল ইসলাম নিজেও একজন প্রতিবন্ধী।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাশেম আলী বলেন, একটি শিশুর পায়ে সব সময় শিকল পড়িয়ে রাখা খুবই অমানবিক কাজ। তবে যতটুকু পারা যায় তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।


আদিতমারী উপজেলার ইউএনও আসাদুজ্জামান জানান, শিশুকে শিকল পড়িয়ে রাখা খুবই দুঃখজনক। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসা করানো উচিত। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেষ্টা করা হবে।


বিবার্তা/জিন্না/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com