শিরোনাম
‘সেই দৃশ্য ভুলতি পারিনে’
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৫১
‘সেই দৃশ্য ভুলতি পারিনে’
এইচ আর তুহিন, যশোর
প্রিন্ট অ-অ+

‘বিশ্বপাড়ার সবার ডেকেডুকে ভোটের মাটে নিয়ে যায়। ভোট দিয়ার পর চেঙ্গুটি মাদ্রাসা মাঠেই কাসেম, শরিফ, আরিফসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে বিশ্বকে রড ও লাঠির মতো কি দিয়ে মারতে শুরু করে। রক্ত দরদর করে পড়ছিলো। সে দৃশ্য দেখার মতো না। কারা যেনো ওরে নিয়ে হাসপাতালে যায়। আমরা ভয়ে বউগের নিয়ে বাড়ি চলে আসি। আসার সময় দেকি রাজ্জাকের পুকুর পাড়ে আরও কয়েকজনকে পিটোচ্চে। আমরা বাড়ি এসে খুব ভয়ে আচি। দুপুরে রান্না নেই, খাওয়াও নেই। সবসময় শুনছি, ওরা আমাগের আবার মারবে। ওর বাবার অসুক, বারান্দাই শুয়ে ছিলো। বিকেল বেলা উত্তর দিক থেকে মেলা মানুষ এক সাথে পাড়ায় ঢুকে সবাইকে মারতে থাকে আর ঘর ভাঙতি থাকে। ওরা আমারগের ঘর ও জাল পুরিয়ে দেই। আর ঘরের সব লুট করে নেই। বোম মারে। ঠেকাতে গেলে সমীরের (ছোট ছেলে) গলাই দা ধরে। বউগের শাড়ি ধরে টানে। তকন বাড়ি ছেড়ে গাঙ পাড় হয়ে পালপাড়ার মন্দিরে উটি। একনও মন থেকে সেই দৃশ্য ভুলতি পারিনে’।


কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্দ্ধ রেনু বালা সরকার। তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার আলোচিত চাপাতলা-মালোপাড়া ট্র্যাজেডির সূত্রপাত ‘বিশ্বজিত’ এর মা। শুক্রবার তার ঘরের বারান্দায় বসে তিনি আনমনা হয়ে আরও বলেন, ‘রাতে শুয়ে আছি, হঠাৎ মনে পড়ে ওই দিনের কথা। সেদিন আর রাতে ঘুম হয় না। গোলমালের বছর (মুক্তিযুদ্ধ) বাচ্চা পেটে ছিলো। রাজাকাররা এসে লুট করে নিয়ে গেলো। কিন্তু কাউকে মারধর করেনি। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়নি। গোলমালের সময়ও এমন ভয় পায়নি’।


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ায় বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মী কাসেম, শরিফ, আরিফুল হুমায়ুনসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে মালোপাড়ার বিশ্বজিৎ সরকারকে হকিস্টিক ও রড দিয়ে মারপিট শুরু করে। পরে বিকেলে কয়েকশ’ অস্ত্রধারী অতর্কিত হামলা চালায় চাপাতলার মালোপাড়ায়।


হামলাকারীরা ২০/২৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি ছাড়াও শতাধিক বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর করে। লুট করে ঘরের মালামাল। পুড়িয়ে দেয়া হয় ১০টি বাড়ি। হামলায় আহত হন অন্তত ২৫ জন।


এসময় আতঙ্কিত গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদ সাঁতরে ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পার হয়ে দেয়াপাড়া গ্রামের পালপাড়া এলাকার পূজামণ্ডপে আশ্রয় নেন। পরদিন প্রশাসন ও রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দর সহায়তায় গ্রামে ফেরেন তারা। জামায়াত-বিএনপির চালানো সেদিনের ওই সহিংসতায় তছনছ হয়েছিল পুরো গ্রাম।


এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন হাওলাদার বাদী হয়ে ৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভয়নগর থানায় মামলা করেছিলেন।


হামলার পর দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ান। ছুটে আসেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, মন্ত্রী-এমপি, দেশি-বিদেশি সংস্থা ছাড়াও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সহিংসতার শিকার মালোপাড়ার মানুষ গত একবছরে পেয়েছেন পাকারাস্তা, নতুন ঘরবাড়ি ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অনেক সাহায্য সহযোগিতা। গ্রামে বসানো হয় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প।


বিবার্তা/তুহিন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com