শিরোনাম
তাপদাহে নাকাল যশোরের জনজীবন
প্রকাশ : ২৪ মে ২০১৭, ২০:২৩
তাপদাহে নাকাল যশোরের জনজীবন
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টানা তীব্র তাপদাহে যশোর অঞ্চলের প্রাণিকূল কাহিল হয়ে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে বিশেষ করে নাকাল খেটে খাওয়া মানুষ। জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। প্রচণ্ড গরমে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগব্যাধী। এ অবস্থায় বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


এদিকে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাগাতার লোডশেডিং। গ্রামঞ্চালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬-১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। শহরে থাকছে না ৭-৮ ঘণ্টা।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের মধ্যে যশোরে সবচেয়ে বেশি গরম পড়ছে।


বুধবার দেশের মধ্যে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে চলছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালের দিকে আর্দ্রতা ৯০ শতাংশের উপরে থাকছে। ফলে ঘেমে-নেয়ে একাকার হচ্ছে মানুষ।


যশোরসহ খুলনা বিভাগের পাঁচ জেলা সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে। সকাল থেকেই সূর্য যেন আগুন ঝরাতে থাকে। মাঝ দুপুরে প্রকৃতি নেয় অগ্নিরূপ। ভ্যাপসা গরমে একটু প্রশান্তির আশায় কেউ কেউ ভিড় জমাচ্ছেন শরবতের দোকানে। আবার কেউ ছুটছেন ডাবের খোঁজে।


কাঠফাটা রোদে চিল-চাতকের মতো হাঁসফাঁসে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে জনজীবন। ফলে দিনের বেলা রাস্তাঘাট এক প্রকার ফাঁকা। একান্ত দরকার ছাড়া মানুষ রাস্তায় নামছেন না।যানবাহনের সংখ্যাও কম। গন্তব্যে পৌঁছুতে মানুষকে বেগ পেতে হচ্ছে। রিকশাসহ অন্যান্য ছোটখাট যানবাহন নিয়ে যারা রাস্তায় নামছেন, তারা অসহনীয় কষ্ট পাচ্ছেন।


রিকশার সামনে ছাতা বেঁধে রাস্তায় নেমেছিলেন ৫৫ বছরের ইয়াকুব আলী। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে রোদে পুড়ে অসুস্থবোধ হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ি বসে থাকলে তো খাবার জুটবে না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশার সামনে ছাতা বেঁধে রাস্তায় নেমেছি। তারপরও তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছিনে। রাস্তার গরম শরীরে এসে লাগছে।


শাজাহান আলী নামে আরেক রিকশাচালক যশোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড়ের গাছের ছায়ায় নিজ রিকশায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এতো গরম যে মাঝে মাঝে মনে হয় নিশ্বাসও নিতে পারবো না। তাই এখানে বিশ্রাম নিচ্ছি। একটি ভাড়া খাটার পর আধাঘণ্টা বিশ্রাম না নিলে আরেকটি ভাড়ায় যাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে রোজগার কমে গেছে।


গরমের তীব্রতায় প্রশান্তি পেতে রাস্তার ধারের দোকানে শরবত পান করছিলেন শহরের বেজপাড়ার রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। তিনি বলেন, গরমে ফ্যানের বাতাসও গায় লাগে না। আবার বাড়িতে গেলেও বিদ্যুৎ থাকে না। গত তিন-চারদিন ধরে গরমে নাকাল হয়ে গেছি। আর দিনে রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কষ্ট আরো বেড়ে যায়।


আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জাকির বলেন, গরমে জীবন এখন ওষ্ঠাগত। খাল, বিল, পুকুর, নদী ভরাট ও গাছ কাটার ফল ভোগ করছি আমরা। আমাদের থেকে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি আরো বেশি। প্রচণ্ড তাপদাহে তারা কাজ করতে গিয়ে ঘামে গোসল করে ফেলছে। কাজে কামাই দেয়ারও উপায় নেই তাদের। একটু বৃষ্টি হলে পরিত্রাণ মিলতো বোধ হয়।


চিকিৎসক নাজমুস সাদিক রাসেল জানিয়েছেন, গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে শিশুরা। ফলে তাদের ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকতে হবে। গরমের কারণে তারা পানি শূন্যতা, আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, লবণ-পানির সরবত বা ডাবের পানি খেতে হবে। তবে যারা মনে করেন- ঘামের কারণে খাবার স্যালাইন খেলে ভালো হবে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ খাবার স্যালাইনে থাকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। কিন্তু ঘামের কারণে শরীর থেকে কেবল সোডিয়াম বের হয়। ফলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য স্যালাইন না খেয়ে লবণ-পানির সরবত ও ডাবের পানি খাওয়া ভালো।


একই সঙ্গে তিনি, শিশু, বৃদ্ধসহ সকলকে বাসি খাবার, রাস্তার পাশের কড়া ভাজা পোড়া ও অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ঢিলেঢালা পোশাক পরা ও রোদের মধ্যে বের হতে হলে ছাতা নেওয়ার তাগিদ দেন।


এদিকে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। যশোর জেলা ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জাহান-ই শবনম জানান, তাদের চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। পাচ্ছেন মাত্র ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এরমধ্যে শহর পাচ্ছে ৩০ মেগাওয়াট।


বিবার্তা/তুহিন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com