শিরোনাম
চট্টগ্রামে একে একে লোপাট হচ্ছে পাহাড়
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৭, ১২:৩৭
চট্টগ্রামে একে একে লোপাট হচ্ছে পাহাড়
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

পরিবেশ আর জীববৈচিত্র্যের তোয়াক্কা না করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাহাড়-খেকোরা একের পর এক পাহাড় সাবাড় করে চলছে। এদের থামানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রামের রোডকেন্দ্রিক উন্নয়নে সাবাড় হচ্ছে এসব পাহাড়। আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের সাথে বায়েজিদ বোস্তামী রোডের সংযোগ ঘটাতে চলছে চার লেনের বাইপাস সড়ক নির্মাণ। পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন রোডটি কেন্দ্র করে উভয় পাশের প্রায় সব পাহাড় কৌশলে সাবাড় হচ্ছে। কোথাও ছিন্নমূলের নামে, কোথাও বাগান কিংবা বসতি নির্মাণের নামে আবার কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সাবাড় হচ্ছে এসব পাহাড়। ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক নামের এই রোডের উভয় পাশে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।


ফৌজদারহাট ও বায়েজিদ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেকসিটি আবাসিক এলাকার উত্তর দিকের পাহাড়গুলো সাবাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা। এই এলাকার উত্তরের পাহাড়গুলো কলার বাগান দিয়ে ঘেরা। বাহির থেকে মনে হবে যেন চারদিকে কলার বাগান। কিন্তু ভেতরে চলছে পাহাড় কাটা। এভাবে পাহাড় কেটে ডিটি বায়েজিদ সংযোগ সড়ক (নির্মাণাধীন) পর্যন্ত হাঁটা পথ তৈরি করা হয়েছে। এই পথ দিয়ে ডিটি বায়েজিদ সংযোগ সড়কে পৌঁছাতে দেখা যায় উত্তর দিকে আরো একটি হাঁটাপথ রয়েছে। এই পথ দিয়ে বায়েজিদ এলাকা থেকে হেঁটে আসা এক মাদ্রাসা ছাত্র জানায়, সে বায়েজিদের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। বায়েজিদ থেকে জঙ্গল ছলিমপুর হয়ে সিডিএ’র নির্মাণাধীন রোড দিয়ে হেঁটে ভাটিয়ারি যাতায়াত করে।


ছাত্রটি জানায়, জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় সব পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় চলে পাহাড় কাটার কাজ। আর প্রধান সড়ক থেকে দূরে হওয়ায় এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও যায় না।


এদিকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর স্থায়ী ক্যাম্পাস এলাকা বায়েজিদের আরেফীন নগরে অনেক পাহাড় সাবাড় করা হয়েছে। একইভাবে জাকির হোসেন রোড থেকে পশ্চিম খুলশি আবাসিক এলাকা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে শেষ প্রান্তে কাঠাল বাগান অতিক্রম করে আরো ভেতরের দিকের পাহাড়গুলোও সাবাড় করা হয়েছে। এই অংশে পাহাড়গুলো কেটে কেটে ডিটি বায়েজিদ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, একটি রোড হলে এর আশপাশে উন্নয়ন হয়। অনেক মানুষ আশপাশে জায়গা কিনে রাখে এবং রোডের কাজ শেষ হলে বেশি দামে এসব জায়গা বিক্রি করে। একই প্রক্রিয়ায় নগরীর অভ্যন্তরের পাহাড়গুলো সাবাড় হয়। দক্ষিণ খুলশি আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ, বাঘঘোনা, ফয়’স লেক, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি, পশ্চিম খুলশি আবাসিক এলাকা, চশমা পাহাড়, রহমান নগর, কসমোপলিটন আবাসিক এলাকা, হিলভিউ আবাসিক এলাকা, কৈবল্যধাম বিশ্বব্যাংক কলোনি, চন্দ্রনগরসহ বায়েজিদ, খুলশি ও আকবার শাহ থানাধীন এলাকায় গড়ে উঠা বেশিরভাগ আবাসিক এলাকা পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে।


চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘পাহাড় রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিডিএ’র পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে চিঠি লেখা হবে।’


এই পাহাড়ি এলাকা সমতল করে এখানে ভবন নির্মাণের জন্য মানুষ তো সিডিএ’র কাছে অনুমোদন চাইবে তখন সিডিএ তা অনুমোদন দেবে কী-না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সিডিএ এসব এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে না।‘


উল্লেখ্য, আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে নির্মাণাধীন ডিটি-বায়েজিদ সড়ক নির্মিত হলে নগরীর ভেতরে আর কোনো যানজট থাকবে না। কক্সবাজার কিংবা রাঙামাটি-খাগড়াছড়িগামী গাড়িগুলো শহরের ভেতরে প্রবেশ না করে সহজে এই রোড দিয়ে চলে যেতে পারবে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com