কোটচাঁদপুরে
হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার সাথে মতবিনিময়
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ২২:৫৯
হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার সাথে মতবিনিময়
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বাওড় পরিদর্শন ও স্থানীয় বাওড় পাড়ের মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।


মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টায় বলুহর বাওড় পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ড. আবু নাইম মোহাম্মদ আব্দুছ ছবুর, বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতির সভাপতি ডাঃ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ মৎস্য পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আনিসুল ইসলাম।


সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।


সভায় বক্তারা বলেন, একটি প্রবাদ আছে "জাল যার, জল তার"। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রকৃত মৎসজীবীদের বাদ বাওড় ও প্রাকৃতিক জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের মাঝে ইজারা দেয়া হয়। ফলে বাওড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও উৎপাদন ধ্বংস হয়ে গেছে। বাওড়গুলোতে বাণিজ্যিক উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃত্রিম খাবার ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের ফলে জলমহলগুলো তার প্রাকৃতিক রূপ হারিয়েছে।


মৎসজীবী হালদার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেন, শত শত বছর ধরে হালদার মৎসজীবীরা বাওড়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার জলমহাল নীতি সংশোধন করে বাওড়গুলো বাণিজ্যিক স্বার্থে অমৎসজীবীদের মাঝে ইজারা দেয়। ইজারা নিয়ে প্রভাবশালী মহলের লোকজন বাওড়ে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ইজারাদাররা বাওড়ে মৎস আহরণ ও বাওড়পাড়ের বাসিন্দারের ওপর নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে।


হালদার সম্প্রদায়ের মৎসজীবীরা বলেন, হালদার সম্প্রদায়ের প্রকৃত মৎসজীবীরা আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে। জীবিকা হারিয়ে আজ মৎসজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালীরা বাওড় ইজারা নিয়ে মৎসজীবীদের বাওড়ে অঘোষিত ভাবে নিষিদ্ধ করেছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এত মানুষ শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের সকল বাওড়ের ইজারা বাতিল করতে হবে। তাহলে বাওড় বাঁচবে। পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাওড়পাড়ের মৎসজীবীরা বাঁচবে। সভায় মৎসজীবী হালদার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে প্রকৃত মৎসজীবীদের মাঝে বাওড় ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।


সভায় প্রধান অতিথি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার হাওড়-বাওড় নিয়ে নিজের মন্ত্রণালয় নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আমি যেটা খুবই অবাক হয়, আমার নিজের মন্ত্রণালয় হিসাবে আমাদের খুব অসহায় লাগে আপনাদের মতই। এটা জেলেদের মন্ত্রণালয়। আমাদের জেলেদের জীবন-জীবিকা যেখানে চলে, সেই হাওড়-বাওড় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিনে। তারা হাওড়- বাওড় ইজারা দেয়, তখন আমরা কাতর হয়ে বলি এটা আমাদের দেন।


উপদেষ্টা বলেন, জাল যার জল তার, এই নীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব। তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। এই প্রজন্মই সমাজের সকল বৈষম্য দূর করবে। প্রকৃত মৎসজীবীদের মাঝে বাওড়ের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমি ভূমি মন্ত্রণালয় সহ সরকারের সকল দপ্তরের কথা বলব। বাওড় পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে বাওড়ের প্রকৃত মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল পক্ষকে এ বিষয়ে সংহত হতে হবে।


উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র সালাহউদ্দিন বুলবুল সিডল, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজুল ইসলাম, প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের সভাপতি শরিফুজ্জামান আগা খান, উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হৃদয় আহসান প্রমূখ।


এসময় উপজেলার বাওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/রায়হান/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com