
ফেনীর ৩০টি গ্রামে সুপেয় পানি ও ফসলি জমির সেচের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিকল্প না থাকায় গ্রামে -গ্রামে চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে। দু'মাসের অধিক ভুগর্ভস্থ পানি না উঠায় অকেজো হতে পারে জেলার ৫০ হাজার গভীর নলকূপ। বৃষ্টি একমাত্র সমাধান বলে জানিয়েছেন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
জানা গেছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানির সংকট দেখা দিয়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায়। ফুলগাজী সকল ইউনিয়নে সুপেয় পানি ও সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপে পানি উঠলেও হস্তচালিত অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় খাবার পানির সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। এতে অকেজো হতে পারে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার নলকূপ। কিছুদিন পুকুরের পানি ব্যবহার করা গেলেও, মার্চ-এপ্রিলে পুকুরের পানি কমে গেছে। অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় বোরো ধানের ফলন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধান উৎপাদন নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এখানকার কৃষক।
ফুলগাজীর করইয়া গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, টিউবওয়েলে পানি না উঠায় এবং অনাবৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে আছে মানুষ। এতে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে। গৃহস্থালি কাজের জন্য মহিলারা অনেক দূরে গিয়ে নদী-নালার পানি এনে ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। শিশুদের খাওয়া, রান্নার ব্যবহার্য পানির কষ্টে অনেক পরিবার। পয়ঃনিষ্কাশনে নারী ও শিশুদের সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পরশুরামের মির্জানগরের বাসিন্দা এমএ মান্নান বলেন, অগভীর নলকূপে এখানকার মানুষের পানির চাহিদা মিটাতেন। দুমাস যাবৎ উপজেলার কোন অগভীর নলকুপে পানি উঠছেনা। গভীর নলকুপে সামান্য পরিমাণে পানি উঠছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি গ্রামে পানির সংকট রয়েছে।
ধর্মপুরের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, দুমাস যাবৎ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে পানির সংকট চলছে। মানুষের চরম দুর্ভোগ স্বর্তেও কিছুই করা যাচ্ছেনা।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম, এবছর ৪ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছে কৃষক। পানির সংকটে দুঃশ্চিন্তায় ভূগছেন তারা। তিনি বলেন, অনাবৃষ্টি থাকলে বোরো উৎপাদনে ফলন কিছুটা ব্যহত হতে পারে।
ফেনী সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একইভাবে সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও দাগনভুুঞার কয়েকটি গ্রামে নলকুপে পানি না উঠায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কালিদাস পাহালিয়া, ফেনী নদী, মুহুরি, সিলোনীয়া, কহুয়া ও ছোট ফেনী নদী বেষ্টিত জেলা হওয়ায় স্বর্তেও নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সংকট মুুহুর্তে কাজে আসছেনা।
ফুলগাজী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আরমান বলেন, উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ৮৭ টি গ্রামে সরকারি অগভীর নলকুপ ১ হাজার ৬১টি, গভীর নলকূপ ১ হাজার ১৮৮টি এবং সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ ৮৮৭ টি। এছাড়া পরিবারগুলোতে ব্যক্তি উদ্যোগে রয়েছে আনুমানিক ১৭ হাজার নলকূপ। গড়ে ৭০ভাগ নলকুপে পানি উঠছেনা। বিকল্প কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা তাই বৃষ্টির পানি একমাত্র ভরসা।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি কাজে ভূর্গস্থ পানির অধিক উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠে না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যাপকহারে ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমাতে হবে, কৃষি কাজে ভূ-উপরিভাগের পানিকে কাজে লাগাতে হবে। ৫মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। এবার জেলার ৬টি উপজেলার অগভীর নলকুপের মধ্যে ৭০ ভাগ এবং গভীর নলকুপের মধ্যে ২০ ভাগের পানি উঠছেনা। বিকল্প ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, এজন্য জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এখন বৃষ্টি একমাত্র ভরসা।
বিবার্তা/মনির/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]