পিন্টু হত্যার দেড় মাসেও আটক হয়নি আসামিরা
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ২০:৫৫
পিন্টু হত্যার দেড় মাসেও আটক হয়নি আসামিরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স আব্দুল হাকিম পিন্টুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। হত্যার দেড় মাস পার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে হত্যা মামলার আসামি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আসামিদের আটক করতে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না পুলিশের।


নিহত পিন্টুর পরিবারের সদস্যদের দাবি, মামলার প্রধান আসামী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও চারটি হত্যা মামলার আসামী আ.লীগ নেতা শহীদ রানা টিপুর মদদে হয়েছে হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছে চারটি মাদক মামলার আসামি ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিজানসহ আ.লীগ নেতা আজিজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আ.লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সাবেক সম্পাদক আশরাফ আলী এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের স্থানীয় কয়েকজন আ.লীগ নেতা ও মাদক ব্যবসায়ীরা।


জানা যায়, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আব্দুল হাকিম পিন্টু নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। ওই রাতে আহত হাকিম পিন্টুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১০ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেন এবং তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে এক দিন থাকার পর তাকে আবারও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ২৩ জানুয়ারি সেখানেই তিনি মারা যান। এরপর ২৪ জানুয়ারি পিন্টুর পিতা বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ রানা টিপুকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নাম উল্লেখ ও আরও তিন থেকে চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।


অভিযোগ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হত্যা মামলার প্রধান আসামী শহীদ রানা টিপুর মাদক চোরাচালানের তথ্য দিয়ে ক্ষতি করায় হত্যা করা হয় আব্দুল হাকিম পিন্টুকে। এছাড়াও যুবলীগ নেতা জেম হত্যাসহ আরও তিনটি হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শহীদ রানা টিপু৷ এমনকি এখনও হুমকি-ধামকি এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন টিপু ও তার মূল সহযোগিরা। সব সময়ই ভয়ের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।


মামলার এজাহারনামীয় মূল আসামীরা হলেন, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের কটাপাড়ার আবু বক্কর ঝাটুর ছেলে আ.লীগ নেতা শাহিদ রানা টিপু (৫০), গিধনীপাড়ার মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে মো. মোবারক হোসেন গুধা (৩৫), চাকপাড়ার মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান মিজান (৩৫), বাখের আলী টিকলিচরের মো. জিল্লুর রহমান গাজু'র ছেলে আজিজুল হক (৪০), গোঠাপাড়ার মঞ্জুর হোসেনের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর (৩৫), কটাপাড়ার আবু বক্কর ঝাটুর ছেলে মো. সাহারুল ইসলাম কালু (৪২)।


নিহত আব্দুল হাকিম পিন্টুর বাবা মামলার বাদী মো. হুমায়ন, নিহতের মা, স্ত্রী পারভিন, বোন জান্নাতি, ভাই ওফিউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, পিন্টু খুনের দেড় মাস পার হলেও খুনিরা প্রকাশ্যে এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেও আসামিদের ধরছেন সদর থানা পুলিশ। এসব ঘটনা ঘটালেও ধরাছোঁয়ার বাইরে টিপুসহ খুনের সাথে জড়িতরা। পিন্টু মাদক প্রতিরোধে কাজ করতো। এলাকায় মাদক পাচারের বিষয়টি প্রশাসনকে জানাতো। এই হচ্ছে পিন্টু কাল। টিপুর মাদক কারবারের তথ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়ায় তার ব্যবসায়ীক সমস্যা সৃষ্টি হয়। একারনেই পিন্টুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।


নিহত পিন্টুর বোন জান্নাতুন খাতুন বলেন, টিপুর লোকজন এখনো হুমকি দিয়ে বলছে, একটা খেয়েছি, আরও খাবো, কয়েকটা মাডার করেছি, কি করতে পেরেছে প্রশাসন বা এলাকার লোকজন, আমাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই দুনিয়া থেকে বিদায়। আমাদের কাজে যে বা যারা বাধা দিবে, তাদের ব্যবস্থা পিন্টুর মতই হবে', এমন অনেক হুমকি দিয়ে কথা বলেই চলেছে টিপুর সন্ত্রাসীরা।


তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কোন কথায় শুনছে না সদর থানা পুলিশ, ধরছে না আসামি, আবার আমাদের কে বলছেন আসামি ধরিয়ে দেন। আসামিরা আমাদের মামলা তুলে নিতেও চাপ দিচ্ছে। আমরা আমাদের দোকানে পর্যন্ত যেতে পারছি না। আমরা পিন্টু হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।


এদিকে, হত্যা মামলায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আ.লীগ নেতা ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ রানা টিপু। মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলেও হোয়াটসঅ্যাপে তিনি জানান, রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। পিন্টু হত্যার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। পাশাপাশি পিন্টু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে আমার কোন ক্ষতি করেননি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পিন্টুর বাবা হুমায়নের দায়ের করা মামলায় ২০ জন এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ এবং বাকি আসামিদের আটক করতে কাজ করছে তারা। মামলার তদন্ত কাজ চলমান আছে। তদন্ত কাজে যেন কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন বলে জানান ।


বিবার্তা/লিটন/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com