দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবশেষে আদালতের রায়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৪নং গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন মাহফুজার রহমান দুলু।

তিন বছর দুই মাসের এ লড়াই শেষে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন।

নির্বাচনী আপীল ট্রাইবুনালের গণনায় জয়ী দুলুকে দায়িত্বভার প্রদানের আগে রংপুর জেলা প্রশাসকের অডিটোরিয়াম কক্ষে শপথ বাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল।

জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম লেবুকে জয়ী ঘোষণা করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তবে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী মাহফুজার রহমান দুলু নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনী আপিল ট্রাইবুনাল এ মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে কোর্টের গণনায় ৪২৩ ভোটের ব্যবধানে মাহফুজার রহমান দুলুকে বিজয়ী ঘোষণা করে আপিল ট্রাইবুনাল। নিম্ন কোর্টের এ রায়ের বিপক্ষে তখন মাজহারুল ইসলাম লেবু উচ্চ কোর্টে আপিল করলে পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন মামলা চলমান থাকার পর চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কোর্টের নির্দেশে ভোট পুনঃগণনা করা হয় এবং ৩২৭ ভোটের ব্যবধানে মাহফুজার রহমান দুলুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ফলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে। তারই প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল এই শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং শপথ বাক্য পাঠ করান।

এ খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকার সর্বত্র আনন্দ উল্লাস লক্ষ করা যায়। দীর্ঘ ৩বছর পর ভোটের সঠিক মূল্য পেয়ে ভোটাররাও উল্লসিত হয়ে ওঠে।

শপথ গ্রহণ শেষে দুলু রংপুর থেকে মোটরসাইকেলের বিশেষ শোভাযাত্রাসহ গঙ্গাচরা ইউনিয়ন পরিষদ এ আসেন।

এ সময় উপস্থিত জনতার কাছে ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া ও সহযোগিতা চান (গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চারবারের চেয়ারম্যান) বড়ভাই মতিয়ার রহমান। পরে পরিষদ প্রশাসক ও ইউপি সদস্য গন ফুলেল শুভেচ্ছাসহ দুলুকে চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে রক্ষিত চেয়ার এ বসিয়ে দেন।

মাহফুজার রহমান দুলু বলেন, সত্য সবসময় সত্য। আজকের এ জয় গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নবাসীর। আপনারা সেদিন যে ভোট আমানত হিসেবে আমাকে দিয়েছিলেন, তার সঠিক প্রতিফলন আজ আদালতের রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে।

গঙ্গাচড়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলু আরও বলেন, সেই দিনের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চলবে ইনশাআল্লাহ্। এটা আপনাদের ইউনিয়ন পরিষদ। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ইউনিয়নবাসীর সেবা ও উন্নয়নে সর্বদা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব-আপনাদের দোয়াই আমার চলার শক্তি।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল জানান, আইনি লড়াইয়ের পর পাওয়া এই জয় সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে এ উপজেলায় অন্তত আর কোন ভালো মানুষ ভোট চুরি করে, অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে চেয়ারম্যান হতে চাইবে না কারন এটার ফলাফল খুবই ভয়াবহ। সবশেষে চোর হিসেবে গণ্য হতে হয় এটা খুবই কষ্টদায়ক।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, আগে চাপে ফেলে-ভয় দেখিয়ে এগুলো করতো। ভবিষ্যতে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে সুষ্ঠু ভোট গণনা ও সঠিক ফলাফল নিশ্চিত করা যায়।

বিবার্তা/নাহিদ/এমবি