
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত অন্ধ অন্তরের খোঁজ নেয়নি কেউ। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে আহতদের আর্থিক সহায়তা মিললেও বাদ পড়েছেন এই অন্ধ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করা অন্তর মিয়া।
অন্তর মিয়ার অন্তরের থাকা দুঃখের কথা ৫ আগস্টের পরে ভুলে গেছেন অনেকেই। ভূমিহীন এই অন্তর মানসিকভারসাম্যহীন স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। জন্ম থেকে অন্ধ এই অন্তর ভিক্ষা করে সংসার চালান।
অন্তরের (৩০) বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের সবুজ পাড়া এলাকায়। স্ত্রী মমতাজ বেগম ও দুই ছেলে মুরছালিন (৪) ও মাহিম (২) কে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন তিনি।
জানা গেছে, বিগত বছরের সরকার পতন আন্দোলনে ২ আগস্ট উপজেলার সরকারপাড়া মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ বাদ একদফা দাবিতে একটি মিছিল বের হয়েছিল। মিছিলটি কিছুদুর আসার পর কলেজ মোড়ে গতিরোধ করে দেন পুলিশ। এর সাময়িক সময়ের জন্য মিছিলের অনুমতি মিলেছি। মিছিলটি কলেজ মোড়ে পেরিয়ে এলএসডি মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। এসময় ছাত্রপ্রতিনিধিরা বক্তব্য দেয়ার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করেন। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে ছিলেন এই অন্ধ অন্তরও।
ঘটনার পর তিনি কয়েকদিন বাড়িতে থেকে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হন। যিনি ভিক্ষা না করলে সংসার নেমে আসে অন্ধকার। সেসময় শাশুড়ি ধারদেনা করে ওষুধ কিনে দিয়েছিলেন তাকে।
সম্প্রতি চিলমারী উপজেলা প্রশাসন থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে ৭ জন কে ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
অন্তর মিয়া জানান, সরকার পতনের আন্দোলনে নিজে থেকেই অংশ নেন। কিন্তু সেদিন মিছিল শেষে বক্তব্য চলার সময় কাঠের লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা করা হয়। আমার ব্যবহৃত চলার জন্য লাঠি কেড়ে নিয়ে আমাকেও বেধরক মারধর করেন। আমি দুইতিন দিন অসুস্থ ছিলাম বাড়ি থেকে বের হতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আমি অন্ধ সব সময় সব খবর জানতে পারি না। সরকার থেকে অনেকেই টাকা সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। আমার নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি-বাড়ি কিছু নেই। আমি শ্বশুরবাড়িতে থাকি।
অন্তরের শ্বাশুড়ি শাহেদা বেগম বলেন, জামাই চোখে দেখেন না অন্ধ, আমার মেয়েও অসুস্থ মানসিক সমস্যা। সেও চলতে পারে না। আমাকে সব দেখা শোনা করা লাগে। জুলাইয়ের মিছিলে গিয়ে মারধর খেয়ে আসছে। দুইতিন দিন চলতেই পারেনাই। আমার খুব সমস্যা হয়েছে সেই সময়। পরে ধারদেনা করে ওষুধ কিনে এনে খাওয়াইছি৷
আন্দোলনে অংশ নেয়া সাজ্জাদ হোসেন নামে একজন বলেন, সেদিনের সেই আন্দোলন আমিও ছিলাম, সেদিন অন্ধ অন্তরকেও দেখিছিলাম মিছিল করতে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে মারধর করেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। তবে বেশি কষ্ট হয়েছে যিনি চোখে দেখেন না, লাঠি ব্যবহার করে চলাচল করে ভিক্ষা করে খান। সেই লাঠি দিয়েন তাকেই মারা হয়েছিল।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিলমারীর ছাত্রপ্রতিনিধি মেহেদী হাসান শান্ত জানান, গণঅভ্যুত্থানে চিলমারী উপজেলায় যারা যারা আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। সেই ভাইদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ তবে সেখানে অন্তরের নাম বাদ পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙে কথা বলেছি। যাতে পরবর্তীতে কোনো ধরনের সহায়তা আসে যাতে ওই অন্ধ ব্যক্তিকে দেয়া হয় সেই বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, সরকারি ভাবে যাদের সহায়তা সেয়া হয়েছিল সেটি সিভিল সার্জন অফিসের তালিকা অনুযায়ী দেয়া হয়েছে। তারপরেও অন্য কোনোভাবে যদি সহযোগিতা করা যায় সেটা দেখা যাবে।
বিবার্তা/রাফি/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]