
দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায়। এদিকে, গত সাত মাস ধরে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ২৮ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি/স্বাস্থ্যকর্মী) বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। কবে পাবেন তারও নেই কোনো নিশ্চয়তা। বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা হতাশার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রমজানের আগে বেতন ভাতা ছাড়ের জোর দাবি তোলেন ভুক্তভোগী সিএইচসিপিরা।
জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের একমাত্র ভরসাস্থল। এতে সিএইচসিপি হিসেবে ২৮ জন কর্মরত আছেন। তারা গ্রামীণ পর্যায়ে অসহায় গরিবের চিকিৎসা, গর্ভবতী ও প্রসূতি, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১২০০ জন মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকে এসব ক্লিনিক থেকে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে রুপসীপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কলারঝিরি মংপ্রুপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রনজিত বড়ুয়া ও সরই ইউনিয়নের লেমুপালং কমিউনিটি ক্লিনিক প্রোভাইডার মালা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের ক্লিনিক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। প্রতিদিন বাসা থেকে ক্লিনিকে যাতায়াতে খরচ হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। তাও মোটর সাইকেলে যেতে হয়। অথচ গত ৭ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। এতদিন ধারদেনা করে পরিবার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়েছে। এখন ধারও দিচ্ছে না কেউ। একই কথা জানালেন সরই ইউনিয়নের আমতলী পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রোভাইডার সিংথোয়াইনু মার্মা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু ত্রিডেবা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রোভাইডার তুতুমা মার্মা ও পৌরসভা এলাকার ছাগলখাইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রেভাইডার জ্যোতিষ বড়–য়া। ইয়াংছা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ নেয় বলে জানান সিএইচসিপি উম্মে হায়াত আরজু।
বেতন ভাতা বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশন’র লামা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবদুস ছালাম জানায়, মনে হচ্ছে 'সংশ্লিষ্ট বিভাগের গাফিলতির কারণে আমরা গত সাত ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। চরম হতাশার মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছি। কারণ এই চাকরির ওপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। দ্রুত বেতন-ভাতা না দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। রমজানের আগে আমাাদের বেতন ভাতা ছাড় করলে সরকারের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো। দ্রুত বেতন ভাতা ছাড় দিয়ে সিএইচসিপিদের গতি ফিরিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসাস্থল কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানান লামা সদর ইউনিয়নের ঘিলাপাড়ার বাসিন্দা মারাং ত্রিপুরা।
তবে উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের জটিলতায় বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মার্মা।
তিনি জানান, আগে 'কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা তাদের বেতন-ভাতা পেয়েছেন। বর্তমান সরকার উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কারণে বেতন ছাড়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বেতন-ভাতা রাজস্ব খাত থেকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করা যায় এই জটিলতার সমাধান দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।
বিবার্তা/আরমান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]