দারিদ্রকে জয় করলো হিলির মেধাবী শিক্ষার্থী লায়লা খাতুন
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:২৭
দারিদ্রকে জয় করলো হিলির মেধাবী শিক্ষার্থী লায়লা খাতুন
হিলি, দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে দারিদ্রতাকে জয় করে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দিনাজপুরের হাকিমপুরের কৃষকের মেয়ে লায়লা খাতুন। বাবার কষ্টের টাকা, নিজের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় এবং শিক্ষকদের সহায়তায় লায়লা মেডিক্যালে ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। দারিদ্র্যের জীবন সংগ্রামের সাফল্যের এই জায়গায় পৌছিয়ে লায়লা খাতুন একজন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে চায় লায়লা খাতুন।


হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামে লায়লা খাতুন এর ছোট পরিবার। ভাই ও বোনের মধ্যে লায়লা খাতুন ছোট। বড় ভাই ঢাকা থাকে সেখানে কোন একটা কাজ করে। বাবা এনামুল হক কৃষক আর মা গৃহিনী। তাই ছোট থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা লায়লার। গ্রামের বিশাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পরবর্তীতে নিজ গ্রামের বিশাপাড়া আদর্শ স্কুল থেকে ২০২২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন স্থানীয় হাকিমপুর মহিলা কলেজে।


২০২৪ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন লায়লা। এরপর মেডিকেল ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন লায়লা। গত ১৯ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে মেধা তালিকায় ২৯৬ তম হয়ে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এখবরে তার নিজ গ্রাম ও এলাকায় খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝড় উঠছে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বন্ধু বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফেসবুকে লায়লার ছবি দিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছে।


সরজমিনে লায়লার বাড়ি বিশাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে মাটির তৈরি তিনটি ঘরে তাদের বসবাস। কিন্তু লায়লা ও তার মা এর অতিথি আপপায়ন এবং ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছে।


এসময় মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া লায়লা খাতুন বলেন, আমি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার হতে চাই না। আমি মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি যে আমি যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। আমার বাবা মা এবং শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপের শিক্ষা গুরু বা শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি নিজে যেহেতু কৃষক গরিব পরিবার থেকে দারিদ্র্যতাকে জয় করে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, সেহেতু আমি জানি একজন দরিদ্র মানুষ কী অবস্থায় থাকে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ডাক্তারি পড়া শেষ করে গ্রামে ফিরে এসে এখানকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ!


লায়লার বাবা এনামুল হক বলেন, আমার যে আয় তাতে আমার মেয়েকে পড়ালেখা করানো কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না। আল্লাহপাক আমার মেয়ের মেধা দিয়েছে, সঙ্গে শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এতদূর আসতে পেরেছে। আজ আমার মেয়ে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে আপনারা তার জন্য সকলেই মন থেকে দোয়া করবেন। কষ্ট করে যেভাবে সে এতদূরে এসেছে একই ভাবে সামনের দিন পাড়ি দিবে ইনশাআল্লাহ!


লায়লার বিষয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা ও প্রাইভেট শিক্ষক এরশাদুল ইসলাম বলেন, লায়লা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আমি তাকে সব সময় সাহস দিতাম। ছোট বেলা থেকে সে খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে আজ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমি খুব খুশি এবং তার জন্য দোয়া করি। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে গ্রামে ফিরে এসে মানুষের সেবা করতে পারে।


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে ভালো পড়ালেখা হয় লায়লা খাতুন তার বড় প্রমাণ। তার মতে এগিয়ে যাচ্ছে হাকিমপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। তাই আর কিন্ডারগার্টেন নয় এখন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুকে ভর্তি করে শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটার আহবান জানান তিনি।


বিশাপাড়া আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আ. কুদ্দুস বলেন, লায়লা খাতুন অনেক মেধাবী ছাত্রী। তার মধ্যে একটা ইচ্ছাশক্তি ছিল, হ্যাঁ, আমি পারবো। আমরা তাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছি। তার কাছ থেকে সব সময় আমরা পজিটিভ কিছু পেয়েছি। সে ছাত্রী হিসেবে যেমন মেধাবী ছিলো তেমনি তার আচার আচরণ ও ভালো ছিলো। আমি চাই, সে এমবিবিএস শেষে আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে।


হাকিমপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মামুনুর রশীদ (আজাদ) বলেন, সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতো লায়লা। ভালো কিছুর করার আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনার কারণেই তার এই সফলতা। তার অধ্যাবসায়ের কারণে সে আজ এই জায়গায় পৌছিয়েছে। আমি তার ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করছি।


হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, লায়লা খাতুন আমাদের হাকিমপুর উপজেলার গর্ব। নিজের ইচ্ছাশক্তিই যে বড় শক্তি, লায়লা মেডিক্যালে চান্স পেয়ে সেটিই প্রমাণ করেছে। সে যেন মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করতে পারে, দেশের একজন ভালো চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেই দোয়া ও শুভ কামনা রইল।


বিবার্তা/রব্বানী/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com